ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

পেঁপে চাষে ভাগ্যবদল

পেঁপে চাষে ভাগ্যবদল

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম। ৯ম শ্রেণির গোন্ডি পেরিয়ে ইতি হয় লেখাপড়ার। তারপর থেকে কৃষি কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শে এবছর শাহি জাতের পেঁপে চাষ করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি। মাত্র ১ বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রয় করে এলাকার কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন তিনি। হাফিজুল এখন এলাকার অন্য চাষিদের কাছে মডেল। তার পুরো বাগানটি যেনো চোখ জোড়ানো একখেত। গাছের মাঝ থেকে ডগা পর্যন্ত ছোট, মাঝারি, বড় আকারের পেঁপে ধরে রয়েছে। হাফিজুলের সাফল্য দেখে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই পেঁপে চাষে। বুধবার সকালে হাফিজুলকে দেখা যায় তার পেঁপের বাগানে কাজ করতে। পুরো বাগান ঘুরে দেখা যায় এ যেনো গাছে টাকা ধরে রয়েছে। এক একটি গাছে প্রচুর পরিমাণে পেঁপে। ৪ দিন আগেও তিনি ৬০ মণ পেঁপে বিক্রি করেছেন তার ২২ কাঁঠা জমির পেঁপে বাগান থেকে। কথা হয় হাফিজুলের সাথে। তিনি জানান, ‘৫ ভাই এর মধ্যে সবার ছোট ছিলাম আমি। পরিবারের টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। মাঠের চাষাবাদ শুরু করি। তারপরে এলাকার অন্য চাষিদের মতো তামাকের চাষ শুরু করি। একসময় দেখি তামাকে একসাথে টাকা পাওয়া যায় ঠিকই; কিন্তু প্রচুর কাজ করতে হয়। আর বাড়ির সকলে মিলে এত কাজের পরেও বিক্রি করলে খুব একটা লাভ হয় না।’

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে আমাদের চিথলিয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার সুকেশ রঞ্জন পাল আমাকে পেঁপে চাষ সম্পর্কে পরামর্শ দেন। কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে এ পেঁপের চাষ করা যায় সেটা সম্পর্কে জানি। পরে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি পেঁপে চাষ। সে সময় এই পেঁপে চাষ সম্পর্কে অনেকেই অনেক কথা বলত।’

তিনি বলেন, মাত্র ১ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ শুরু করি। গাছ লাগানোর পরে ৩-৪ মাসে গাছে পেঁপে ধরলো এবং ৫ মাস পরেই সেটা বাজারে বিক্রির উপযোগী হলো। পেঁপে চাষ খরচ ও খাঁটুনি কম। আর ভালো দাম পেলে খুবই লাভ হয়। তাই আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিনি বলেন, ‘গত বছর ২ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ করি। বিঘাপ্রতি আমার ২০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছিলো। আর প্রায় ৯০ হাজার টাকার বেশি করে বিঘাপ্রতি পেঁপে বিক্রি করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘এবছর আমি ৮ বিঘা জমিতে হাইব্রিড শাহি জাতের পেঁপের চাষ করেছিলাম। অতিরিক্ত বৃষ্টি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমার ৭ বিঘা জমির পেঁপে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। সবে মাত্র এক এক গাছে ৬-৭ কেজি করে পেঁপে হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে গাছগুলো মরে গেল। তবে সে ক্ষতি পুশিয়ে দিচ্ছে আমার এই ২২ কাঁঠা জমির পেঁপেতেই।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে পেঁপের যে দাম তাতে খুবই লাভ। আগে ৩-৪ টাকা কেজি পেঁপে বিক্রি করেছি। তারপরেও লাভ হয়েছে। এখন তো মাঠ থেকেই পাইকারি বিক্রি করছি ২০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে আমার ২২ কাঁঠা জমিতে ৪৩০-৪৪০টি পেঁপে গাছ আছে। এর মধ্যে ৪০ রয়েছে পুরুষ গাছ। বাকি সব গাছগুলোতে বেশ ভালো পেঁপে ধরেছে। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি গাছে ২০ কেজি করে পেঁপে পাবো বলে আশা করি। আর এবার পেঁপের সাইজ খুবই ভালো। আর খেতেও খুব সুস্বাদু। ৪ দিন আগেও এই জমি থেকে ৬০ মণ পেঁপে বিক্রি করেছি। এর আগেও ৩ বার পেঁপে বিক্রি করেছি। এক মাস পরপর এ জমি থেকে পেঁপে বিক্রি করি। এরই মধ্যে আমি এক লাখ টাকার উপরে পেঁপে বিক্রি করেছি এবং আরো ৫০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করবো এই জমি থেকেই। অন্য বছর ৪ বিঘায় যে লাভ হয় না, এ বছর বাজারে দাম ভালো হওয়ায় এক বিঘাতেই তার বেশি লাভ হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পেঁপে চাষের ক্ষেত্রে খুব একটা খরচ নেই। আর পরিশ্রমও কম। আমার কাছ থেকে অনেকেই এই পেঁপে চাষ সম্পর্কে জেনেছে। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজন নিয়মিত আমার ক্ষেত পরিদর্শন করে আমাকে পরামর্শ দেন। যার কারণে কখন কি করতে হবে তা সঠিক নিয়মে করতে পারি।’ অন্যান্য চাষের চেয়ে পেঁপে চাষ লাভজনক হওয়ায় হাফিজুল ইসলামের মতো এলাকার অন্য কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এই পেঁপে চাষে। একই এলাকার কৃষক মিনহাজ আলী বলেন, ‘যে পরিমাণ পেঁপে ধরছে তাতে তো দেখছি এই পেঁপে চাষ লাভজনক ফসল। হাফিজুলের দেখা দেখি তার পাশের জমিতে করেবে, এই পেঁপে চাষ এমন করে এই পুরো মাঠই তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষে ঝুঁকবে কৃষকরা। তামাকের মতো তো এত খাটনির কাজ না, ঘুম কামাই করা লাগে না, মাঠ থেকেই বিক্রি করা যায়। সামনে বছর আমি নিজেও ১০ কাঁঠা জমিতে পেঁপে চাষ করব, বলে মনে করছি।’ কৃষক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সবজি হিসাবে পেঁপে খেতে খুবই ভালো লাগে। আর চাষ করতে খরচ কম। এটা চাষ করাও সহজ। আমি ভাবছি ১ বিঘা জমিতে এ শাহি জাতের পেঁপের বাগান করব।’ খুবই কম সময়ে এ পেঁপে চাষ করে কৃষকরা বেশ ভালো লাভবান হতে পারবেন বলে জানান মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। তিনি জানান, ‘পুষ্টিমানের দিক থেকে পেঁপে খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাদ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত