ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ক্যান্সার কেন হয়?

ক্যান্সার কেন হয়?

একটি প্রাণঘাতী ও মারাত্মক জটিল রোগ ক্যান্সার। সঠিক সময়ে এটি নির্ণয় করা না হলে এবং চিকিৎসা না পেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হয়। আর তাই ক্যান্সার নিয়ে আতঙ্কের শেষ নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সচেতন হওয়া বেশি জরুরি। বৈজ্ঞানিকভাবে বলা যায়, যখন শরীরের কোনো স্থানে অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি হয়ে চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হয়, তখন ক্যান্সার রূপ ধারণ করে। এটি রক্তনালী ও লসিকানালীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় রোগটি সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনো পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়।

ক্যান্সারের প্রকারের শেষ নেই। জানলে অবাক হবেন ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে রোগটি নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ক্যান্সার কেন হয়? : ঠিক কী কারণে ক্যান্সার হয় সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। এটি সৃষ্টিতে একাধিক কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও প্রধানত বংশগত ও পরিবেশগত কারণকেই মূলত দায়ী করা হয়। ক্যান্সারের সম্ভাব্য কিছু কারণ জেনে নিন-

বয়স : সাধারণত বয়স যত বাড়তে থাকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। কেননা এ সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে সববয়সিদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

খাবার এবং জীবনযাপনের ধারা : খাবার ও জীবনযাপনের ধারার সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে গবেষকরা। এই যেমন- ধূমপান বা মদ্যপানের সঙ্গে ফুসফুস, মুখ ও কণ্ঠনালীর এবং যকৃৎ বা লিভারের ক্যান্সারের যোগাযোগ রয়েছে। একইভাবে পান-সুপারি, জর্দা, মাংস, অতিরিক্ত লবণ, চিনি ইত্যাদি খাবারের সাথেও ক্যান্সারের যোগসূত্র রয়েছে। সাধারণত যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করে তাদের মধ্যেও ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়।

পারিবারিক ইতিহাস : ক্যান্সারের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষত স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে পরিবারের বোন, মা, খালা, নানির যদি স্তন ক্যান্সার থাকে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মেরও এই ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবারের কারো যদি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা থাকে তাহলে অন্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়।

পরিবেশ এবং পেশাগত কারণ : রাসায়নিক পদার্থের সাথে ক্যান্সারের অনেক বড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেমন, মেসোথেলিওমিয়াতে (এক ধরনের দুর্লভ ক্যান্সার, এতে ফুসফুসের চারপাশ এবং পেটের দিকের কোষগুলো আক্রান্ত হয়) আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই এসবেস্টস ধাতুর সংস্পর্শে আসার কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত জাহাজ তৈরির শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এই ধাতুর সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। এই কারণেই অনেক দেশে এই ধাতুর ব্যবহার নিষিদ্ধ। একইভাবে রঙের কারখানা, রাবার বা গ্যাসের কাজে যারা নিয়োজিত থাকেন তারা এক ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসার কারণে মুত্রথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে অনেক দেশে এসব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিবেশগত কারণের অন্যতম একটা হচ্ছে সূর্য। রোদে বেশিক্ষণ থাকার কারণে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তেজস্ক্রিয়তার কারণেও বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। রোগটি নিয়ে যত বেশি জানবেন তত বেশি এটি মোকাবিলা করা সহজ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত