ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মশলায় স্বাবলম্বী সহস্রাধিক নারী

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মশলায় স্বাবলম্বী সহস্রাধিক নারী

‘আমচুর’ শুকনো সবুজ আম অথবা কাঁচা আম দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি তরকারি রান্নার মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারীরা রান্নায় এটির স্বাদ সম্পর্কে জ্ঞাত। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মৌসুমে প্রায় প্রতি ঘরেই আমের তৈরি এই আমচুর সংরক্ষণ করেন। শুধু নিজেদের সংসারের জন্য নয় বাণিজ্যিকভাবে এটি জেলার ‘আমের অর্থনীতি’তে ভূমিকা পালন করে।

জানা যায়, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সহস্রাধিক নারী আমচুর তৈরি করে নিজেদের সংসারের খরচ চালান। আমচুর তৈরি করতে পুঁজি না লাগলেও পরিশ্রম লাগে। এটি তৈরি করতে কাঁচা আম কিনতে হয় না। ঝড় অথবা তাপদাহে গাছ থেকে পড়া আম ব্যবহার করা হয় আমচুর তৈরিতে। চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুচরা বাজারে আমচুর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০৫ টাকা কেজি দরে।

প্রতি বছর আমচুর তৈরি করে বেশ লাব করেন মনাকষার গৃহবধূ রোকেয়া বেগম। তিনি জানান, বাগান থেকে কুড়িয়ে আনা আমগুলো চিরচির করে কেটে ঘরের চালাই বা উঠানে কয়েকদিন রোদে শুকাতে দেয়। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তৈরি হয়ে য়ায় আমচুর। বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। তবে বৃষ্টির পানিতে ভিজলে রং নষ্ট হয়ে যায়। তাই সতর্ক থাকতে হয়। এ আমচুর ফেরিওয়ালাদের কাছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। যা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাড়ার খরচ ও নিজের পোশাক ক্রয় করি। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় হাজার খানেক ফেরিওয়ালা দাঁড়ি পাল্লা ও বস্তা নিয়ে সাইকেলে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরেন আমচুর ক্রয়ের জন্য। এরপর আমচুরগুলো কানসাট আম বাজারের গোপালনগর মোড়ে বড় বড় আড়তে বিক্রি করে। প্রতি কেজিতে প্রায় ১০-১৫ টাকা লাভ হয়। একজন ফেরিওয়ালা দৈনিক সর্বনিম্ন ৩০-৫০ কেজি আমচুর আড়তে বিক্রি করেন। শ্যামপুর ইউনিয়নের চামাগ্রামের ফেরিওয়ালা আওয়াল বলেন, মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস সকাল-বিকাল বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে ৩০-৪০ কেজি আমচুর সংগ্রহ করি। তারপর কানসাটের গোপালানগর মোড়ে আড়তে ১০০-১০৫ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। এতে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হয়। শুধু আমাদের গ্রামে প্রায় শতাধিক ফেরিওয়ালা রয়েছে আমচুর কেনার জন্য। কানসাটের গোপালনগর মোড়ের আড়ত মালিক রজব হোসেন বলেন, ২৫-২৬ বছর থেকে আমচুরের পাইকারি ব্যবসা করি। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন ফেরিওয়ালার কাছ থেকে আমচুর ক্রয় করি। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৬০ কেজি বা তারও বেশি আমচুর দেয়। মৌসুমে অল্প পুঁজিতে খরচ বাদে ৫-৬ লাখ টাকা আয় করতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমচুরগুলো কুমিল্লা, ঢাকা, নোয়াখালী ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে বড় বড় পার্টির কাছে বিক্রি করি। আরেক আড়ত মালিক গোলাম রসুল বলেন, এখানকার ১০টি আড়তে প্রায় এক হাজার ফেরিওয়ালারা আমচুর দেয়। যেখানে আমের মণ ধরা হয় ৪৫ থেকে ৫০ কেজিতে সেখানে আমচুরের মণ ধরা হয় মাত্র ৪১ কেজিতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত