রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বদলে যাওয়া বাংলাদেশে পরিবর্তনের অঙ্গীকার ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। প্রত্যাশা ছিল আগের সব আসর ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু একাদশ আসরের যাত্রা শুরু হয়েছিল হাঙ্গামার মধ্যে দিয়ে। টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। উদ্বোধনী দিনেই শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মেইনগেটে ভাঙচুর চালায় টিকিট-বঞ্চিত ক্ষুব্ধ সমর্থকরা। টিকিট বুথ থেকে শুরু করে বিপিএলের পোশাকি-সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন তারা একপ্রকার তচনচ করে দেয়। একপর্যায়ে প্রবেশ পথের লোহার গেটও ভেঙে ফেলেন দর্শকরা।
এবারের দেখা গেছে বোলারদের ‘নো’ বল কিংবা ওয়াইড বলের অদ্ভুত সব প্রদর্শনী। যে কারণে সাধারণ দর্শকের সরল মনেও সন্দেহ দানা বেধেছিল। প্রশ্নটা তুলব কি তুলব না ভেবেও কেউ কেউ বলে বসেন এটা কি ফিক্সিং ছিল? বিপিএলের প্লেঅফ শুরুর আগমুহূর্তে ঢাকাপর্ব চলাকালে একটি গণমাধ্যমের খবরে আসে সন্দেহজনক পারফরম্যান্সের জন্য ১০ ক্রিকেটার বিসিবির দুর্নীতি বিরোধী ইউনিটের (আকু) তীক্ষè নজরে আছেন। যেখানে দেশি ক্রিকেটারদের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি ক্রিকেটারের নামও। যদিও এর মধ্যে দেশি দু’জন ক্রিকেটার তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে সন্দেহ ওঠা ক্রিকেটারদের বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনো চলমান রয়েছে তদন্ত কার্যক্রম। একই সঙ্গে বিসিবিও স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। এর পর পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন বয়কট, ম্যাচ বর্জনের হুমকি ছিল। দুর্বার রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটাররা ম্যাচ বর্জন করেছিলেন। বিপিএলে কেলেঙ্কারি নতুন মাত্রা পায় দুর্বার রাজশাহীর বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও বিমান টিকেট না পাওয়ায়। এ সব নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে বিসিবি জানাল, বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটার ব্যবস্থায় সব দায়িত্ব এখন থেকে বোর্ডের। বিপিএলের একাদশ আসর শেষ হওয়ার পরদিন গতকাল শনিবার দুপুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিবি জানায়, বিপিএলে ‘কঠোর আর্থিক প্রটোকলের’ পরিকল্পনা নিয়েছে বোর্ড।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা জানায়, বিদেশি ক্রিকেটারদের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটি সরাসরি দেখভাল করবেন তারা। প্লেয়াস ড্রাফটে নাম লেখানো সব বিদেশি ক্রিকেটারের চুক্তির দায়িত্ব বোর্ড নেবে এবং তাদের পারিশ্রমিক সময়মতো ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পাওয়া বোর্ড নিশ্চিত করবে। বিদেশি ক্রিকেটারদের সার্বিক লজিস্টিক্যাল ব্যাপারটিও সামলাবে বিসিবি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, বিপিএল শেষে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিজ নিজ গন্তব্যে মসৃণভাবে ফেরা নিশ্চিত করবে বোর্ড। এছাড়াও জানানো হয়, আরো কঠোর আর্থিক প্রটোকল গগে তুলতে, ক্রিকেটারদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ও আর্থিক প্রক্রিয়া প্রবাহমান রাখতে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বিসিবি।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, বিপিএলকে পেশাদারি ও মসৃণ করে তুলতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ‘বিপিএলের শুদ্ধতা তুলে ধরতে এবং সব দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারকে পেশাদারি অভিজ্ঞতার স্বাদ দিতে বিসিবির অঙ্গীকারকেই ফুটিয়ে তুলছে এই উদ্যোগগুলো। এই লিগের সব ধরনের পরিচলন ও আর্থিক ক্ষেত্রগুলো শক্তিশালী করতে সব অংশীদারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ চালিয়ে যাবে বোর্ড।’ সামনের বিপিএলে তাকিয়ে কিছু প্রশ্নের জায়গা অবশ্য আছে। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আগামী বিপিএলের আগেই বিসিবির নির্বাচন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ফারুক আহমেদই বোর্ড প্রধান থাকবেন নাকি বিসিবিতে পরিবর্তন আসবে, সেটি বড় কৌতূহলের জায়গা। নতুন কেউ দায়িত্বে এলে তার নেতৃত্বাধীন বোর্ড নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে কি না, দেখার থাকবে সেসবও। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে বিসিবির চুক্তিও শেষ এই আসর দিয়ে। বর্তমান ফ্র্যাঞ্চাইজির কতগুলো সামনে থাকে, নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি আসে কি না, কৌতুহল থাকবে এ সব নিয়েও।