চমক রেখেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। এই দলে নেই নাসুম আহমেদ, তার জায়গায় নেওয়া হয়েছে তানভির ইসলামকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করায় ২১ মাস পর ফিরেছেন মোহাম্মদ নাঈম অথচ জায়গা হয়নি নিয়মিত পারফরমার নুরুল হাসান সোহান ও মোসাদ্দেক হোসেনের। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে। নাসুমের বাদ পড়া নিয়ে গাজী আশরাফ জানালেন, ‘আমরা কিছু পরিবর্তন এনেছি। সেখানে নাসুমের বাদ পড়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি- এটা দেখে আমি বেশ অবাকই হয়েছি। আমাদের সামনে বেশ কিছু সিরিজ আছে, এশিয়া কাপ আছে। এই সময়ের ফাঁকে কিছু ক্রিকেটারকে আমরা নতুন করে পরখ করতে চাইছি। নাসুম ও তানভীর- দুজনেই ভালো পারফরমার তবে এবার আমরা তানভীরকে সুযোগ দিয়েছি।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করায় ‘এ’ দলে ডাক পেয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। গ্লোবাল সুপার লিগেও রংপুরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তারপরও ফেরা হল না ওয়ানডে দলে। এ নিয়ে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর ব্যাখ্যা, ‘সোহানের ব্যাপারটা হচ্ছে, তিনি আমাদের বিবেচনায় আছেন। কিন্তু একই দলে আমরা একাধিক উইকেটকিপার নিতে পারি না এই পজিশনে। কারণ, শেষ সিরিজে লিটন দাস ছিলেন না। আপনারা জানেন, সে সময় তিনি একটু খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা সময় তিনি ছিলেন আমাদের সেরা ফিনিশারদের একজন। সেই কারণে এবং তিনি এখন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়কও হয়েছেন।’
সামনেই এশিয়া কাপ আছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ রয়েছে এরপর ভারতের বিপক্ষেও সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজগুলো প্রয়োজনে সোহানকে ডাকা হবে বলে জানিয়ে রেখেছেন গাজী আশরাফ, ‘নুরুল হাসান সোহান অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় আছেন। তিনি একজন কার্যকরী খেলোয়াড়, বিশেষ করে ছয়-সাত নম্বর ব্যাটিং পজিশনে। তাই তাকেও আমরা ভবিষ্যতে দলে দেখতে পাবো বলে আশা করছি। এবং কোনো একজন খেলোয়াড়কে ভালোভাবে দেখার জন্য সামনে এশিয়া কাপের আগে শ্রীলঙ্কা সিরিজ, এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশের মাঠে ম্যাচ, তারপর ভারতের সঙ্গে সিরিজ; এই পুরো সময়কে আমরা কাজে লাগাতে চাই।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলেও ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি মোসাদ্দেক হোসেনের। ১৬ ম্যাচে ৪.০৪ ইকোনমি রেটে সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট নিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। ১৪ ইনিংসে ৪৮.৭০ গড় ও ১০৬.৩৩ স্ট্রাইক রেটে করেন ৪৮৭ রান। আবাহনী চ্যাম্পিয়নই হয়েছে তার কাঁধে চেপে। এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পরও মোসাদ্দেককে দলে না নেওয়ার ব্যাখ্যায় গাজী আশরাফ বললেন, ‘আপনি আপনার সাংবাদিকতার আলোকে মনে করছেন যে মোসাদ্দেক হোসেন এই মুহূর্তে জাতীয় দলে খেলা উচিত। আমি ঠিক সেই জিনিসটা মনে করছি না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাচ্ছি, কারণ যতক্ষণ মেহেদী হাসান মিরাজ আছে, মোসাদ্দেকের কোনো সুযোগ নেই। খুব কোনো জিনিস খুব স্পষ্টভাবে হওয়া উচিত। জাস্ট আপনারা বুঝে অনেক সময় না বোঝার ভান করে কথা বলেন অনেক সময়, এটা পীড়াদায়ক।’
ঘরোয়া লিগে আলো ছড়িয়ে টেস্টে ফিরেছিলেন এনামুল হক বিজয়। কিন্তু টেস্টে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি তার। তাহলে কি ক্যারিয়ার শেষ বিজয়ের? গাজী আশরাফ জানালেন, ‘বিজয় যদি ব্যর্থ হন, তাহলেও তাকে সিস্টেমে রাখব। জাকির, জয় সবাই সিস্টেমের মধ্যে থাকবে। ব্যর্থ হওয়া ক্রিকেটেরই অংশ। কিন্তু সেখান থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করা যে কীভাবে তারা সফল হতে পারেন, এখানে খেলোয়াড়দেরও নিবেদন থাকতে হবে। তিনি (খেলোয়াড়) হচ্ছেন মুখ্য মানুষ, যে তাঁর ভুলত্রুটিগুলো শুধরাতে পারেন। অভিজ্ঞতাকে কেনা যায় না।’ ২১ মাস পর নাঈম শেখকে দলে ফেরানোর কারণ হিসেবে গাজী আশরাফের ব্যাখ্যা, ‘দলের মধ্যে যেটা চাচ্ছি, ভালো স্ট্রাইক রেটের জন্য ভালো ইনটেনসিটিতে ব্যাটিং করা। সেখানে একে-অন্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছেন তানজিদ ও পারভেজ। নাঈম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো হয়তো খেলতে পারেননি। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে জানানো হয়েছিল । সেই আলোকে তিনি যথেষ্ট অনুশীলন করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি তিনি খুব ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন।’ এদিকে, সৌম্য সরকারের না থাকা নিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘সৌম্য সরকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার। ১০ বছর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের ক্রিকেটের যে দাবি, তার সঙ্গে তিনি খাপ খাইয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন। বড় ক্যানভাসে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আমরা অফার করবো এবং তিনি আমাদের মনে আছেন। তাকে আরও এক স্টেপ এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে যোগ্যতার আলোকে।’