ঢাকা শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমাদের ব্যাটিং মানদণ্ডে পৌঁছায়নি : শান্ত

রজতজয়ন্তীতে বিব্রতকর ইনিংস হার বাংলাদেশের

রজতজয়ন্তীতে বিব্রতকর ইনিংস হার বাংলাদেশের

আড়াই দশক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা-আইসিসির পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। সে হিসেবে গত ২৬ জুন ছিল ২৫ বছর পূর্তি। যে মুহূর্তে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন করেছে বাংলাদেশ, ঠিক সেসময় বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো লাল সবুজ দলকে। অবশ্য উদযাপনের শুরুতে খুশির উপলক্ষ্য পেয়েছিল টাইগার সমর্থকরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত খেলে ড্র করে ছিল তারা। কিন্তু পরের টেস্টেই ধরাশয়ী হয় শান্ত-লিটনরা। গলে হেসেছে তাদের ব্যাট, দিন শেষে হেসেছে বাংলাদেশও। গল থেকে কলম্বো-ভেন্যু বদলাতেই যেন পালটে যায় পারফরম্যান্সও। কলম্বোতে তৃতীয় দিনেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সাম্ভাব্য ফল। আরেকটি ইনিংসটি ব্যবধানে হারের দ্বারপ্রান্তে ছিল সফরকারিরা। চতুর্থ দিন কতটুকু লড়াই করতে পারে, পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে পারে সেটাই ছিল দেখার। আগের দিন ১৩ রানে অপরাজিত থাকা লিটন দাসের ওপরই নির্ভর করছিলেন বাংলাদেশ। অথচ সবচেয়ে হতাশ করেছেন তিনিই। যাকে ঘিরে ছিল লড়াইয়ের আশা, সেই লিটন দাসই সাজঘরে ফিরলেন সবার আগে। বাঁ-হাতি স্পিনার প্রবাত জয়সুরিয়ার সামনে অসহায় বাংলাদেশ চতুর্থ দিনের সকালে মাত্র ৩৪ বল টিকতে পারল। নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতায় শঙ্কা সত্যি করে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ব্যবধানেই হারল তারা।

লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার কলম্বোতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিনে ১৩৩ রানে থেমেছে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে ইনিংস ও ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। প্রথম ইনিংসে তাদের ২৪৭ রানের জবাবে স্বাগতিকরা করেছিল ৪৫৮ রান। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে সফরকারীদের গুটিয়ে দেয় লঙ্কানরা। আগের দিনের ৬ উইকেটে ১১৫ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল তারা। বাকি ৪ উইকেট খুইয়ে দলটি যোগ করতে পারে আর কেবল ১৮ রান। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নবম ও সব মিলিয়ে ৪৭তম ইনিংস ব্যবধানে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।

টাইগারদের গুঁড়িয়ে দিতে ৫৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন প্রবাত। এই সিরিজে আগের তিন ইনিংসে স্রেফ ১ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ম্যাচসেরা হন শ্রীলঙ্কার একমাত্র ইনিংসে ১৫৮ রান করা ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা। আগের টেস্টেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি। খেলেছিলেন ১৮৭ রানের ইনিংস। সিরিজসেরার পুরস্কারও তারই। গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট হয়েছিল ড্র। এই টেস্ট জিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত দুই ম্যাচের সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার দল। দিনের পঞ্চম বলেই বিদায় নেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন। প্রবাতের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। ৪৩ বলে তার সংগ্রহ ১৪ রান। লিটন আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের ইনিংস আর কতক্ষণ টেকে সেটাই ছিল কেবল দেখার। কারণ, হার তখনই একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রবাতের পরের শিকার হন নাঈম হাসান। পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্রিজের বাইরে চলে যান তিনি। দ্রুততার সঙ্গে বল লুফে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক কুসল মেন্ডিস। ৮ বল খেলে নাঈম করেন ৫ রান। টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন প্রবাত। ফিরতি ক্যাচ দিয়ে তাইজুল ইসলাম মাঠ ছাড়েন ১৫ বলে ৬ রানে।

বাংলাদেশের দুর্দশার ইতি ঘটান আরেক স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকে। ৭ বলে ৬ রান করে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ইবাদত হোসেন। রিভিউ নিলেও পাল্টায়নি মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া আউটের সিদ্ধান্ত। অন্যপ্রান্তে অপরাজিত থেকে যান নাহিদ রানা। গলে প্রথম টেস্টে দারুণ পারফরম্যান্সের পর এমন পরাজয়ে বেশ হতাশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছেন, ‘প্রথম টেস্টে যেভাবে শেষ করেছিলাম, এরপর এই টেস্টের ফল খুব হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটিং মানদ-ে পৌঁছায়নি। সুযোগ ছিল, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি।’ ব্যাটিং ব্যর্থতায় উইকেটের কোনও দায় দেননি শান্ত। তার মতে ব্যাটারদের আউটের ধরন কোনোভাবেই গ্রহযোগ্য নয়, ‘আমি এখনও মনে করি আমাদের ব্যাটিং করা উচিত ছিল আগে। উইকেট একটু ধীর গতির ছিল ঠিকই, কিন্তু যেভাবে আমরা আউট হয়েছি, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সবসময় সহজ অপশন বেছে নিয়েছি, আর ভুল করেছি।’

তবে ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝেও বোলারদের কাজ প্রশংসা পেয়েছে অধিনায়কের মুখে, ‘তৃতীয় দিনে আমরা যেভাবে বোলিং করেছি, তা এই ধরনের কন্ডিশনে দারুণ। সেটা দেখে ভালো লেগেছে।’ শান্ত দাবি করেছেন, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কারণে বিদেশের মাটিতে টেস্ট পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। উন্নতি হলেও দলের ধারাবাহিকতা নিয়ে চিন্তিত সদ্য বিদায়ী এই অধিনায়ক, ‘আপনি যদি শেষ দুই-এক বছরের টেস্ট দল দেখেন, আমরা দেশের বাইরে এসে এখন জিতছি বা ড্র করছি। আগের থেকে যদি আপনি বলেন, এখন ভালো হয়েছে। তবে ধারাবাহিকতার জায়গায় ঘাটতি আছে। খেলায় হারজিত থাকবে। আমার মনে হয় যে, প্রথম টেস্টটি আমরা যেভাবে আধিপত্য দেখিয়ে খেললাম, এই টেস্টটা আরেকটু ভালো খেলতে পারতাম। তাহলে উন্নতির জায়গাটা আমরা দেখতে পেতাম।’

শান্ত আরও যোগ করে বলেছেন, ‘এই জায়গাগুলোতে শেখার বিষয় থাকেই। ভুল থেকে শিখছি বলেই আগে থেকে ভালো ফলাফল হচ্ছে। মাঝেমধ্যে আমরা জিতছি, মাঝেমধ্যে আমরা খেলাটা ড্র করতে পারছি। তবে প্রথম টেস্টটা আমরা যেভাবে খেললাম, এই টেস্ট আরও ভালোভাবে খেলা দরকার ছিল।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারলেও শান্ত ইতিবাচক অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় নাঈমের বোলিংটা আমরা এই সিরিজ থেকে নিতে পারি। সাতটা টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে তার। ডিফিকাল্ট, এভাবে সেরকম পারফর্ম করা, স্পেশালি এই টেস্ট ম্যাচের শুরুর কয়েকটা ওভার ভালো না করার পরে যেভাবে তৃতীয় দিনে বোলিং করে কামব্যাক করেছে। তাইজুল ভাই, আমরা সবসময় জানি যে তিনি দলের জন্য ৪০-৪৫ ওভার করে বল করে। এটা কিন্তু অনেক কঠিন একটা ব্যাপার, ওই একই জায়গায়।’

শান্ত আরও বলেছেন, ‘তাই তাইজুল ভাইয়ের পাঁচ উইকেট বা লম্বা স্পেল বোলিং করা। সুতরাং, এই জিনিসগুলো আমরা নিয়ে যেতে পারি। মুশফিক ভাই অনেকদিন পরে এরকম একটা লম্বা ইনিংস খেলেছে। সো, ওভারঅল বেশ কিছু জায়গা আছে যেগুলা নিয়ে আমরা সামনে আগাতে পারি। ওয়ানডে সিরিজে আমার মনে হয় না এই সিরিজ থেকে খুব বেশি কিছু আমাদের নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে, কারণ আলাদা ফরম্যাট। তাই ওটা আলাদাভাবে চিন্তা করাটাই ভালো।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত