গোনাহ থেকে বাঁচার উপায়

মানুষের প্রতি হিংসা ও আল্লাহর হুকুম অমান্য করার কারণে অভিশপ্ত হয়েছে শয়তান। এক সময় যে আল্লাহতায়ালার কাছের একজন ছিল, এখন সে মানুষকে আল্লাহর কাছ থেকে দূর সরানোর সব ফন্দি আঁটে। মানুষকে গোনাহ ও পাপে লিপ্ত করতে পারলেই সে নিজেকে সফল মনে করে।

তবে শয়তান মানুষকে যতই ধোঁকা দিক এবং আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত করুক, বান্দা আল্লাহর কাছে তওবা করলেই তিনি সব মাফ করে দেন, মানুষের সব পাপ মুছে তাকে একেবারে নিষ্পাপ বানিয়ে দেন। এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম : ২৭৪৮)।

গোনাহ হয়ে গেলে তাই মানুষের উচিত সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেওয়া। হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আমিও প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (বোখারি : ২৭০২)।

এর পাশাপাশি গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার পথ-পন্থা অবলম্বন করা উচিত সবার। এমন ৮টি কৌশল তুলে ধরা হলো এখানে-

নিয়ত করা (গোনাহের সুযোগ পেলেও গোনাহ করব না) : নবীজি (সা.) বলেন, ‘কোন বান্দা একটি পাপ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ অতঃপর সে আবার পাপ করল এবং বলল, ‘হে আমার রব! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সুতরাং সে যা ইচ্ছা করুক।’ (বোখারি : ৭৫০৭)

সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু’। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৩৪০)।

অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা : পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা নূহ : ১০)।

গোনাহের পরিবেশ পরিবর্তন করা : মানুষের ওপর পরিবেশের প্রভাব পড়ে। যেমন কেউ মসজিদে গেলে তার অন্তরে আল্লাহ-রাসুলের প্রতি ভালোবাসা বাড়ে। কবরস্থানে গেলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। আবার কোথায় আড্ডা দিতে গেলে এসব ভুলে যায়, তখন ফূর্তিতে মেতে ওঠে। তাই কোনো জায়গায় গোনাহের পরিবেশ থাকলে সেই স্থান ত্যাগ করে ভালো পরিবেশে যাওয়া উচিত।

প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা : হাদিসে বলা হয়েছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া না হলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)।

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া : বাংলা উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

বাংলা অর্থ : আল্লাহর নামে, আল্লাহতায়ালার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহতায়ালার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহতায়ালাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি : ৩৪২৬)।

ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া : মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতো।’ (বোখারি : ৬৫৭)।

জবানের হেফাজত করা : হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রসুলে কারিম (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর আজাব-গজব থেকে নাজাতের উপায় কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি তোমার জবান হেফাজত করো, গোনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করো এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।’ (তিরমিজি : ২৫৬৯)।