ইসলামের শুরুর দিকে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য। পরে জাহেলি যুগের বিশ্বাস দূর হলে এর অনুমতি দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের এর আগে কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কেননা, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখেরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (ইবনে মাজাহ : ১৫৭১)।
কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যেকোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়। তবে জুমার দিন কবর জিয়ারত করলে জিয়ারতকারীর জন্যও তা ক্ষমালাভের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কবর জিয়ারতের জন্য সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’ (আল মুজামুল আউসাত : ৬১১৪)।
মুসলমানদের কবর দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। কবরস্থানকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা কর্তব্য। কবরের ওপর দিয়ে চলাচল করা কিংবা কবরের অবমাননা করা অনুচিত। কবরস্থানে ঢুকে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ বলতে হয়। দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা ও পবিত্র কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হয়। দোয়া শুধু একজনের জন্য নয়, সব মুর্দার জন্যই করতে হয়। শবেবরাত ও দুই ঈদের দিনে অনেকে পারিবারের সদস্যদের নিয়ে কবর জিয়ারত করতে আসেন। প্রিয় আত্মীয়ের সুনির্দিষ্ট কবরে এলেও দোয়া করতে হয় সবার জন্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) কবরের পাশ দিয়ে কিংবা কবরে গেলে কবরবাসীদের সালাম দিতেন। তাদের জন্য দোয়া করতেন। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে যান এবং বলেন- বাংলা উচ্চারণ : ‘আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লা হিকুন।’ (মুসলিম : ২৪৯)।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন- বাংলা উচ্চারণ : ‘আস সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগ ফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার। বাংলা অর্থ : হে কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন, তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি। (তিরমিজি : ১০৫৩)।
প্রিয়জন, মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কবরের পাশে গেলে মন বিষণ্ণ হওয়া বা চোখ অশ্রুসিক্ত হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে কবরের কাছে গিয়ে হা-হুতাশ করা ঠিক নয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর আম্মার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে ক্রন্দন করেন। তাঁর সঙ্গীসাথীরাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি চাইলে তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। কাজেই তোমরা কবর জিয়ারত করবে। কেননা, তা মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ)।
কবর জিয়ারতে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি দোয়া পড়তেন। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কবরে আসতেন তখন তিনি উল্লিখিত দোয়া পড়তেন- বাংলা উচ্চারণ : আস সালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিন, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন, আস আলুল্লাহা লানা ওয়ালা কুমুল আফিয়াহ। বাংলা অর্থ : হে গৃহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমরা, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। (মুসলিম : ৯৭৫)।
জিয়ারতের সুন্নত : কবরস্থানে গিয়ে সর্বপ্রথম মৃতের চেহারার দিকে মুখ করে ‘আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিন ওয়া ইন্না ইনশাল্লাহু বিকুম লাহিকুনা ওয়া নাসআলুল্লাহা লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াতা।’ দোয়াটি পড়ে সালাম দিতে হবে। এভাবে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব দাঁড়াতে যাবে। এরপর ইচ্ছা হলে দরুদ শরিফ ও কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা যাবে। বিশেষ করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইয়াসিন, সুরা মূলক, সুরা ইখলাস, সুরা তাকাসুর ইত্যাদি সুরা পড়া যাবে। এরপর হাত না উঠিয়ে মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব করবে; হাত ওঠাতে চাইলে জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৪২-২৪৩)।
রাতে কবর জিয়ারত : রাতে কবর জিয়ারত করা জায়েজ। কেননা, হাদিস শরিফে শর্তহীনভাবে জিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাত বা দিন নির্দিষ্ট করা হয়নি। (ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৫/৪৫৩)।