ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঝুলছে ইশরাকের মেয়র পদ

ঝুলছে ইশরাকের মেয়র পদ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে চান ধানের শীষের প্রার্থী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে তাকে শপথ পড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অনেকটা ঝুলে আছে এই মেয়র পদ।

এদিকে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নেওয়া নিয়ে বিএনপিতেও রয়েছে দ্বিমত। কেউ কেউ বলছেন, আইনি লড়াই শেষে যেহেতু গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, সেহেতু ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়া ঠিক হবে না।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আইনি লড়াই শেষে প্রমাণ হয়েছে, ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে এবং ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। এটা একটা বড় বিজয়। ইশরাক হোসেন অনেক জনপ্রিয়ও। এরপরও আমার মতে, ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি শপথ নিলে বিএনপি কিছুটা বিপাকে পড়তে পারে।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সরকার ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল চাইছে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক, আর বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো চাইছে আগে সংসদ নির্বাচন হোক। তাই ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে শপথ নিলে সরকার ও ওই রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় নির্বাচন আগে করার বিষয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’

এছাড়াও বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা হলে তাদের অনেকেই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেউ কেউ এ-ও বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়া ঠিক হবে না। সামনে নির্বাচন হলে এমনিতেই ইশরাক মেয়র হবেন।’

২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা দেওয়া, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসি নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন ইশরাক। এ মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আটজনকে বিবাদি করা হয়।

মামলার আরজিতে ইশরাক অভিযোগ করেন, নির্বাচনি কর্মী এবং তাদের এজেন্টদের মারধর করা হয়। এ নিয়ে তখন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। মামলায় ইশরাক দাবি করেন, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার লাগান। এ বিষয়ে ইশরাক নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও দিয়েছিলেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ইশরাক হোসেনের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। তার নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর করা হয়। ইশরাক আরও দাবি করেন, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। মামলার আরজিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও আদালতে জমা দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে গত ২৭ শে মার্চ ধানের শীষের প্রার্থী ও প্রয়াত বিএনপি নেতা অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। পরে ২৭ এপ্রিল আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওদিন রাতেই এ সংক্রান্ত গেজেট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এদিকে, শেখ হাসিনার আমলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর আদালতের রায়ের মাধ্যমে পদে বসাকে সমর্থন করেন না স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তার মতে, এর মাধ্যমে অবৈধ ওইসব নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা থেকে বিরত থাকা উচিত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন এই উপদেষ্টা।

এর আগে, আদালতের রায় পেয়ে মেয়র পদে বসেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। নির্বাচন হয়েছিল ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। তাতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী বড় ব্যবধানে জয়ী হন। অবশ্য ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলা করেন মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আর কার্যালয়ে যাননি। তাকে অপসারণ করে গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল সরকার।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১ অক্টোবর শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর করা মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে বলা হয়। নির্বাচন কমিশন সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এভাবে পদে বসে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোকে একধরনের বৈধতা দেওয়া হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আপনি কী বলবেন? জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি মনে করি, ওই নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং অ্যাকনলেজ (স্বীকৃতি দেওয়া) করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা এবং অবৈধ নির্বাচন থেকে কোনো প্রাপ্তিস্বীকার না করার সততাটা থাকা উচিত।’ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তো উচ্চ আদালতে যাওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে দিচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের ঘটনার সময় এটা হয়েছে। তখন আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম না। এই যে রায়টা হলো, এ মামলায় কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনো পক্ষ ছিল না, আমরা পক্ষভুক্ত ছিলাম না। সুতরাং অফিশিয়ালি এটার অপোজ করার সুযোগ আমাদের নেই।’

এ বিষয়ে ইশরাক হোসেন জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে শপথ নেবেন তিনি। আদালতের রায় সরকার অনুসরণ করবে বলেও তিনি আশাবাদী। এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব দেখতে পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ইশরাক।

ইশরাক,মেয়র
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত