দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। নওগাঁর মাঠে মাঠে হলুদ রঙের মাখামাখি। সরিষার খেতের পাশে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহে মৌবাক্স স্থাপন করছেন মৌ-খামারিরা। জেলা ছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর ও নাটোর জেলা থেকে ৮১ জন মৌ-খামারি এসেছে। মৌবাক্সের মাধ্যমে কৃত্রিম পদ্ধিতে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌসুমে অন্তত ৬-৮ বার মধু সংগ্রহ হবে। খাঁটি মধু পেতে ভিড় করছেন ক্রেতারাও। পাশাপাশি মৌখামারিদের কাছ থেকে সরাসরি মধু সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন কিছু উদ্যোক্তা। তারা সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের মাধমে প্রচার-প্রচারণা করে থাকেন। যা থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি আয় করছেন তারা। অলস বসে না থেকে এ কাজ করে আয় করায় নিজের খরচ ও চাহিদা মেটাতে পারছেন তারা। পাশাপাশি পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারছে। তবে অনেকটা ঝুঁকি ও লোকসান হবে জেনেও ক্রেতাদের কাছে কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছে দেন তারা।
রাজশাহী কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন জেলার মান্দা উপজেলার ফতেপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা রহমতুল বাসির। তিনি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘থ্রি আর বি ফুড’ নামে একটি পেজের মাধ্যমে মধু বিক্রি করেন।
তরুন এ উদ্যোক্তা বলেন- গত কয়েক বছর আগে পড়াশুনা শেষ হয়েছে। পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করছি। যেহেতু বসে আছি বাড়ি থেকে বাবা-মায়ের সেবা করা যায় এবং এ সময়টাকে কাজেও লাগানো যায় সেই ভাবনা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা। শুরুতে কি করা যায় তা মনস্থির করলাম। এরপর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক অনলাইনে খাঁটি মধু নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করলাম। অনেকেই ভেজাল মধু ক্রেতাদের দিয়ে প্রতারণা করে। এতে ক্রেতাদের মাঝে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। সে ধারণা থেকে ক্রেতাদের বুঝাতে সক্ষম হলাম যে খাঁটি মধু দিবো। আমরা সরাসরি খামারে গিয়ে মৌ-খামারিদের কাছ থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করি। রহমতুল বাসির বলেন- গত সাড়ে তিন বছর থেকে মধু বিক্রি করে আসছি। ক্রেতাদের ভালো সাড়া রয়েছে। যা থেকে বাড়তি কিছু আয় আসছে। সরিষা মধু প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। সরিষা মৌসুমে বেশি মধু বিক্রি করতে পারি। এছাড়া কালোজিরা ও লিচু মধু পাওয়া যায়। এগুলোর দাম বেশি হওয়ায় বিক্রিও কম হয়। গত বছর তিন লাখ টাকার মধু বিক্রি হয়েছে। এবছর বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি এবং আরো বেশি বিক্রির আশা।
আরেক উদ্যোক্তা বালিচ গ্রামের নাহিদ হাসান বলেন, পণ্য হাতে পাওয়ার পর আমরা টাকা নিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই অনলাইনে মধু বিক্রি করতে হয়। অনেক ক্রেতা আছে যারা মধু নিয়ে ভালো সাড়া দেয় এবং পেজে রিভিউ দেয়। পুনরায় তারা মধু কিনে। আবার অনেকে মধু নেয়ার জন্য অর্ডার দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হলে তারা কুরিয়া থেকে উত্তোলন করে না। পরে ফেরত চলে আসে। এতে আমাদের লোকসান হয়। কারণ আমরা কুরিয়া খরচ বহন করে পাঠায়। রাজশাহী জেলার মোহনপুর থানার দর্শনপাড়া গ্রামের মৌচাষি সারফিন আহমেদ। তিনি মান্দা উপজেলার সোনাপুর গ্রামে ৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মধুর উৎপাদন বেশি হচ্ছে। কারণ কুয়াশার পরিমাণ বেশি হলে মধুতে পানি বেশি হয়। এবার তা হয়নি। উন্নত মানের মধু পাওয়া যাচ্ছে। আমরা পাইকারিতে মধু বিক্রি করে থাকি। বিভিন্ন কোম্পানি ও কিছু উদ্যোক্তা আছে তারা আমার কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে। এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলে কোনো চাকরি না করেও ভালো আয় করা সম্ভব।