ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে নওগাঁর নাক ফজলি আম

জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে নওগাঁর নাক ফজলি আম

নওগাঁর নাক ফজলি আম জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাদে গুণে অনন্য এ জাতের আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি জেলাবাসী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আম দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। আগামীতে ব্যাপক বাণিজ্যের সম্ভবনা রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে নাক ফজলি জাতের আম বাগান রয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৪ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।

জানা যায়, তৎকালীন ইংরেজ শাসক লর্ড লিটন ছিলেন বাংলার গভর্নর (১৯২২-১৯২৭) এবং স্বল্প সময়ের জন্য ভারতের অস্থায়ী ভাইসরয়। তার আমলে এ অঞ্চলে জমিদারী প্রথা চালু ছিল। জেলার বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে বিনোদ কুমার লাহিড়ী পরিবার জমিদারি অঞ্চল ছিল। প্রতিবছর জমিদার বিনোদ কুমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তীর্থে যেতেন ভারতে। ফেরার পথে সঙ্গে নানা ধরনের ফলদ গাছের চারা নিয়ে আসতেন। তার মধ্যে একটি নাক ফজলি আম। পরবর্তীতে নাক ফজলি আম কলম চারার মাধ্যমে আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে যেতে থাকে। এভাবেই আমটি পরিচিতি পায়। জেলার বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলায় এ জাতের আম সবচেয়ে বেশি বাগান রয়েছে। এ উপজেলার মাটির গুণাগুণের কারণে নাক ফজলি আমের স্বাদ অতুলনীয়।

নাক ফজলি আমের চামড়া পাতলা এবং সরু বিচি (বীজ) যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। এ আমে কোন আঁশ না থাকায় খেতেও সুস্বাদু। মিষ্টতার দিক দিয়ে ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। প্রতিটি আমের গড় ওজন প্রায় ২৫০-৩০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এ আম লম্বায় প্রায় চার ইঞ্চি আর চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়ে থাকে। এর নিচের অংশ সামান্য বাঁকানো। নাক বড় এবং স্পষ্ট বেরিয়ে আসা। আকারে অনেকটা বড় এবং নাক স্পষ্ট হওয়ায় এর নাম হয়েছে নাক ফজলি। আম পাকার পরও শক্তভাব থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব।

স্বাদে-গুণে অনন্য এ জাতের আমকে নিজ জেলার পণ্য হিসেবে ব্যান্ডিং করতে ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছে বদলগাছী উপজেলা নাক ফজলি আমচাষি সমবায় সমিতি। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। প্রায় আড়াই মাসে এ পণ্যের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় গত ২৪ এপ্রিল জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

বদলগাছী উপজেলার মাইলস্টোন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু জর গিফারী বলেন, জমিদার বিনোদ কুমার লাহিড়ীর হাত ধরে এ আমের বিস্তৃতি ঘটে। পরবর্তীতে উপজেলার বাহিরে এখন জেলাজুড়ে বিস্তৃতি হয়েছে। ভোক্তাদের কাছে নাক ফজলি আমটি খুবই পছন্দের। আম পাড়ার পর ব্যবসায়ি ও উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়। এ আমের ব্যাপক বাণিজ্যের সম্ভবনা রয়েছে। তবে চাষীরা যদি আমের ন্যায্য দাম পায় আগামীতে বাগানের পরিমাণ বাড়বে। এ উপজেলার আমচাষী গয়েশপুর গ্রামে আমচাষি আসাদুল ইসলাম লিখন বলেন, প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ৫০ বিঘাতে নাক ফজলি। এ জাতের আমে সময় খুবই সীমিত।

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পাড়া শুরু হয়। আম সহজে পঁচে না। তবে পাকা শুরু হলে আর কীটনাশক দিয়েও রাখা সম্ভব হবে না। যার কারণে পাড়া শুরু থেকে ১২-১৫ দিন পর আর বাজারে পাওয়া যাবে না। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ আমের ভোক্তা বেশি। বদলগাছী উপজেলা নাক ফজলি আমচাষি সমবায় সমিতি এর সভাপতি বেলালুর রহমান বলেন- নাক ফজলি আম আঁশবিহীন ও স্বাদে গুণে অনন্য। অন্য কোনো আমের স্বাদ এমন হয় না। এটি নওগাঁর স্থানীয় আম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ আম সরবরাহ হয়ে থাকে। এ আমকে অন্য কোন জেলা যেন নিজের বলে দাবি করতে না পারে এজন্য ব্যান্ডিং করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে এ জাতের আম পৌঁছে দেওয়াসহ ন্যায্য দাম পেয়ে যেনো চাষিরা উপকৃত এ লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। জিআই পণ্য হিসেবে এ আম স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুশি। ব্যান্ডিং পাওয়ায় এ জাতের আম চাষে চাষিদের মাঝে আরও আগ্রহ বাড়বে। বদলগাছী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন- নাক ফজলি এ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। এ আমের বিশেষত্ব আঁশ নাই এবং একটু শক্ত হওয়ার কারণে সহজে পচে না। এ আম আকারে অনেকটা বড় এবং নাক স্পষ্ট। এ কারণে এর নাম হয়েছে নাক ফজলি। এরই মধ্যে এ জাতের আম সারা দেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় জেলাবাসীরা খুশি।

তিনি বলেন- উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ২৫৫ হেক্টর জমিতে নাক ফজলি আমের বাগান রয়েছে। গতবছর সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। যা থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার নাক ফজলি আমের বাণিজ্য হয়েছে। এ বছর আমের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও বাজার দর বেশি হবে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার নাক ফজলি আমের বাণিজ্যের আশা। এ জাতের আশ চাষে চাষিদের আগ্রহ রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত