দিনাজপুরে দীর্ঘমেয়াদি খরার কারণে চাষিরা একদিকে যেমন পাট পচানোর পানি পাচ্ছেন না, তেমনি খরায় এবার পাটের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। ভরা বর্ষার মৌসুমেও পানির সঙ্কটে পুরোদমে পাট কাটা শুরু করতে পারছেন না। আবার সাহস করে পাট কাটা শুরু করেও বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় শুকিয়ে যাচ্ছে পাট।
আষাঢ় মাসে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং তীব্র রোদ ও তাপদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল, ডোবা, পুকুর। বপনের ১০০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পাট কাটতে হয়। আষাঢ় মাসের শেষে পাট কাটা শুরু করতে হয়। তবে এবার বৃষ্টি না থাকায় পাট কাটতে পারছেন না চাষিরা। আবার পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় জলাশয়ে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ন্যূনতম যে পরিমাণ পানি থাকার প্রয়োজন সেটিও নেই। এতে পাট কেটে পচনের জন্য জাগ দেওয়া কৃষকরাও পড়েছেন বিপদে। কৃষকরা জানায়, যথাসময়ে পাট না কাটলে পাটের আঁশ শক্ত ও শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পাট উৎপাদন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত ব্যয় সামলে এরপর যদি পানির অভাবে জাগ দেওয়া না যায় তাহলে লোকসানের চাপে পথে বসে যেতে হবে। এদিকে চাষ ও জাগ দেওয়ার সময় পানির অভাবে পাটের রং ঠিকমতো আসে না। এতে পাটের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক।
এ নিয়ে কথা হয় দিনাজপুর খানসামা উপজেলার গাড়পাড়া এলাকার পাট চাষি শরিফের সঙ্গে। তিনি জানান, নদীর খালগুলোও শুকিয়ে গেছে। পাট কাটার উপযুক্ত সময় হলেও খাল-বিলে পানি না থাকায় কাটতে পারছেন না।
খানসামা উপজেলার চাষি মনু মিয়া জানান, জমিতে পাট চাষ করেছি জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পাট জমি থেকে কাটতে পারছি না। এরইমধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়েও চিন্তিত তিনি। সদর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, ৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আলাই নদীতে পাট জাগ দিয়েছি। কিন্তু সেখানেও পানি কমে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত না হলে পাট ছাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। চর ও বন্যাকবলিত এলাকার চাষিরা পাট কাটতে শুরু করেছে কিন্তু নদীর খাল-বিলে পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া মেইনল্যান্ডের চাষিরা পুকুর ভাড়া করে পাট জাগ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। আবার অনেক পাট চাষি পুকুরে পানি সেচ দিয়ে জাগ দিচ্ছেন। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে আষাঢ়-শ্রাবণে খাল-বিল, পুকুর, ডোবা পানিশূন্য হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ার যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে এতে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।