গতকাল বুধবার দুপুর থেকে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তর ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে তারা মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন এবং সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন।
দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন তারা। এসময় আন্দোলনকারীরা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষোভে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘সুকান্তের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘পুলিশ কমিশনারের চামড়া, তুলে নেব আমরা’, ‘পুলিশ কমিশনার জুলফিকার, আস্ত একটা স্বৈরাচার’, ‘অবৈধ পুলিশ লীগ, মানি না, মানব না’, ‘লড়তে হবে, লড়তে হবে- এই লড়াই জিততে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকালে খুলনার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে এসআই সুকান্ত কুমার দাসকে আটক করে মারধর করেন স্থানীয় জনতা ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। তিনি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় কর্মরত। খুলনায় একটি মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এ ঘটনার শিকার হন বলে জানা গেছে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, রাতে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে সুকান্ত কুমারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, সুকান্তর বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে মনার বাসভবনে হামলা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানমুখী আন্দোলনে পুলিশের হামলার অভিযোগে অন্তত চারটি মামলা আছে। এসব মামলার একজন অভিযুক্তকে ছেড়ে দেওয়া আইনের অপব্যবহার এবং পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রমাণ ও অভিযোগ তাদের। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন বলে জানান তারা। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে মূল ফটকে তালা লাগিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারা দেশে বহু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে যাদেরই অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হরে। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চাইছে, আমার পদত্যাগে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে আমার পদত্যাগ করতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি অফিস করছি। সরকার চাইলে আমাকে যে কোনো সময় উইথড্র করে নিতে পারে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়, যা বর্তমানে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এছাড়া বিএনপির খুলনা মহানগর সভাপতি শফিকুল আলমের বাসায় ভাঙচুরসহ আরও দুটি মামলা চলমান আছে তার বিরুদ্ধে। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম ‘এসআই সুকান্তের নামে খুলনায় চারটি মামলা আছে। আমার বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগে খুলনা মহানগর বিএনপির দপ্তর সেলের সদস্য আসাদুজ্জামান হারুন সদর থানা একটি মামলা করেছেন। ওই মামলার এক নম্বর আসামি এসআই সুকান্ত। এছাড়া অন্য আরও তিনটা মামলা আছে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে।’