ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শোক ও গৌরবের জুলাই

অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা ছিল তুঙ্গে

অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা ছিল তুঙ্গে

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে অনড় ছিলেন চাকরি প্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালনসহ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন এবং অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চালান শিক্ষার্থীরা। চার দফা দাবির ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সমন্বয়করা। এই জনসংযোগ সারা দেশেই সমন্বিতভাবে চালানো হয়। এর আগে দুই দফায় সারা দেশে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলন করা হয়। কোটাব্যবস্থা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদাদল। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ সমর্থন জানায়।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, আমরা অনলাইনে কোটাবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছি। এছাড়া আন্দোলনের হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছি। বিভিন্ন আবাসিক হল এবং বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগদানের যৌক্তিকতা সম্পর্কে বোঝানো হয়। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটে আমরা ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৪৭টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্দোলনে সাদাদলের সমর্থন : সাদাদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি পরিপত্রের অংশবিশেষ অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনগ্রসর ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে সমাজে এগিয়ে আনার জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যখন সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা চালু হয় তখন দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার, চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থা সংস্কারের জন্য আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে সে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপান্তরিত হলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরি (নবম-ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করে। কিন্তু গত ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগ আপাতত এ রায় বহাল রাখেন। ২০১৮ সালের পরিপত্রের অংশবিশেষ বাতিল করে দেওয়া রায়ের প্রতিবাদে পুনরায় চাকরিপ্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, আমরা মনে করি তা ন্যায্য ও যৌক্তিক। কারণ কোটা কখনোই মেধার বিকল্প হতে পারে না।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য বলছে : চবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা চট্টগ্রাম শহরের দুই নম্বর গেটসংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে দুপুর ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর শাটল ট্রেনে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শহরে যান আন্দোলনকারীরা। ষোলশহর রেলস্টেশনে জড়ো হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে অবস্থান নেন তারা। এরও আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করে চবি শিক্ষার্থীরা।

জাবি : ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিকাল ৪টায় মানববন্ধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহিদ মিনার প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ প্রত্যাহারের আগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তিন দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, চার দফার ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইনে আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলবে, এটা সারাদেশেই সমন্বিতভাবে করা হবে। যেভাবে আমাদের চার দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে, সেভাবেই তা চলতেই থাকবে। এখন পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের কোনো দপ্তর থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি এবং কোনোরকম আশ্বস্তও করেনি। এজন্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবেই। যা দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যাপক সাড়া ফেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক প্রচার হয়। কোন কোন বিভাগ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে, ফেসবুকে তার হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেন সমন্বয়করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত