২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘ডামি’ নির্বাচন (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন) আয়োজন ও ভোট চুরির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ১৯৩ জনের নামে আদালতে মামলার দুই দিন পরেই প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিএনপির এক নেতা। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা আমলি আদালতে বাদী কামরুল হাসান মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক রুমেলিয়া সিরাজাম মামলার বাদী ও বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু রায়হান খানের বক্তব্য শোনেন এবং মামলাটি নথিজাত করার আদেশ দেন। টাঙ্গাইল আদালতের পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলাটি নথিজাতের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এতে মামলাটি আর চালানোর প্রয়োজন রইল না। এর আগে গত সোমবার ভূঞাপুর উপজেলার আলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুল হাসান ওই আদালতে মামলাটি করেন। বিচারক সেদিন মামলাটি আমলে নিয়ে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার বাদী কামরুল হাসান বলেন, ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির নেতারা মামলাটি প্রত্যাহার করতে বলায় তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করেছেন। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ আয়োজন ও ভোট চুরির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ধরনের মামলা করতে কেউ জেলা বিএনপির সঙ্গে কোনো প্রকার পরামর্শ করেননি, প্রত্যাহারের ব্যাপারেও কেউ জানাননি। মামলাটিতে ১৯৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা ছাড়া মামলার উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর হাসান (ছোট মনির), সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আওয়াল, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক, সাবেক পুলিশ সুপার, বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় পাঁচজন সাংবাদিক। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতের নির্দেশক্রমে শেখ হাসিনা অন্য আসামিদের যোগসাজশে বিগত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি একটি ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেন। বাদী (কামরুল হাসান) ভূঞাপুরের আলোয়া ইউনিয়নের ভারই উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার ছিলেন। তিনি অন্য ভোটারদের সঙ্গে ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে মারধর করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচনে পুলিশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোটকেন্দ্র দখল করে জোর করে নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্স ভর্তি করেন। এভাবে অন্যের ভোট চুরি করে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তানভীর হাসানকে (ছোট মনিরকে) সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী করা হয়।