ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নাম পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাদের পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট নেতাদের নাম। তবে নাম পরিবর্তনে ব্যক্তির চেয়ে আঞ্চলিকতা প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
সবশেষ গত ৪ জুন ২৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়েছে। তবে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ডিগ্রি কলেজের নাম বদলের সিদ্ধান্তে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণে এখন ‘ব্যক্তিনির্ভরতা’ বাদ দিয়ে ‘স্থানীয়তা’ ও ‘গণগ্রাহ্যতা’কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে নির্ধারণ করেছিল, সেগুলোর নাম এখন সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা বা এলাকা অনুযায়ী পুনর্নামকরণ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে ছয়টি সরকারি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ, মানিকগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ’ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরের নাম হয় ‘ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ’।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে দেশের ১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম নির্ধারণ করা হয়। যেমন নেত্রকোনার ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন ‘নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং কিশোরগঞ্জের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়’ এখন ‘কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচিত।
এরপর ১৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। বিএসএমএমইউর নাম হয় ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’, খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ‘খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয় ‘সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া ২৯ মে দেশের ৩৭ জেলার ৬৮টি সরকারি কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণেও এসেছে বড় পরিবর্তন। ১৩ এপ্রিল ১৫টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নাম থেকে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া হয়।
২৪ এপ্রিল নাম বদল হয় আরও ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, যার মধ্যে রয়েছে ১৬টি স্কুল, তিনটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দুটি কলেজ। প্রাথমিক স্তরেও ব্যাপক নাম পরিবর্তন হয়েছে। গত ১০ মাসে মোট পাঁচ দফায় ৭৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ ১৮ মে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বিষয় প্রাধান্য পাবে।