দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের জন্য আরও বেশি আর্থিক প্রবেশাধিকার, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও এসএমই খাতের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানও তৈরি করে। হাতুড়ি ও ছেনি ব্যবহারের দিন শেষ হয়ে গেছে। কিছু এসএমই এরইমধ্যেই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তবে এর পরিধি আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।’ গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এসএমই সংক্রান্ত প্রতিবেদনের জন্য ২১ জন সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, দেশের উন্নয়ন মডেল নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও এসএমই খাত এখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলস্তম্ভ। তিনি আরও বলেন, তবে এসএমই খাত জিডিপিতে মাত্র ২৬ শতাংশ অবদান রাখে, যা যথেষ্ট নয়। অন্যান্য অনেক দেশে এই অবদান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায়। উন্নত দেশগুলো কেবল বৃহৎ শিল্পের উপর নির্ভর করে, এটি একটি ভুল ধারণা। জাপানে অনেক এসএমই বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে। এমনকি রোলেক্স ঘড়িও এসএমই দ্বারা তৈরি করা হয়। খাতটির অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এসএমই খাত নারীদের অংশগ্রহণের বড় সুযোগ তৈরি করছে। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল কথায় সীমিত নয়, তাদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। আর সেই জায়গা তৈরি করছে এসএমই খাত।’ তিনি এসএমই খাতে অর্থায়নের বাধা প্রসঙ্গে বলেন, ‘ব্যাংকাররা অনেক সময় বড় ঋণের দিকে ঝুঁকে থাকেন, ছোট উদ্যোক্তাদের উপেক্ষা করেন। তারা ১০ কোটি টাকার ঋণ দিতে পছন্দ করেন, কিন্তু ফেরত পাওয়ার দিকটি ভাবেন না। ব্যাংকার ও নীতিনির্ধারকদের এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।’ পুনঃঅর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসএমইর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম রয়েছে। এটি আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব। অর্থ মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। আমরা যদি ৬০ হাজার কোটি টাকা জ্বালানি ভর্তুকি দিতে পারি, তবে এসএমই খাতে কিছু বরাদ্দ দিতে পারব না কেন?’ তিনি এসএমই খাতের জন্য একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রণালয় এ জন্য অর্থায়ন করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন ডিজিটালভাবে তথ্য পেতে চান।’ এসএমই ফাউন্ডেশনকে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মতো মডেল অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সুপরিকল্পিত প্রকল্প এবং সঠিক মানুষ থাকলে বিশ্বব্যাংক, আইএফএডির মতো দাতারা এগিয়ে আসবে।