মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতার প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে নগদে প্রশাসক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বৈধ বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। পৃথক দুটি রিটের জারি করা রুল খারিজ করে গতকাল রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, মুহাম্মদ নওশাদ জমির, মোস্তাফিজুর রহমান খান ও আইনজীবী আবুল কালাম খান দাউদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। রায়ের পর আইনজীবী আবুল কালাম খান দাউদ বলেন, নগদে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। রিটকারীদের লুকাস স্ট্যান্ড নাই (আইনগত এখতিয়ার নেই) এই গ্রাউন্ডে রিটটি খারিজ করেছে আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিটকারীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ২১ আগস্ট এক বছরের জন্য নগদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ আদেশে বলা হয়, ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিকসেবা ‘নগদ’-এ চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে এক বছরের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার উল্লাহ, পলাশ মণ্ডল, আবু ছাদাত মোহাম্মদ ইয়াছিন, উপ-পরিচালক চয়ন বিশ্বাস ও আইয়ুব খানকে সহায়ক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলো। তখন নগদের আগের পর্ষদও ভেঙে দেয়া হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, নগদ ডাক বিভাগের সেবা। তাদের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক সেবাটি পরিচালনা করবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নগদের নির্বাহী পরিচালক সাফায়েত আলম হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের পরিচালক, ডাক বিভাগের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নগদে নিযুক্ত প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে বিবাদী করা হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে নগদে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ১০ দিনের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুল শুনানির ধারাবাহিকতায় অপর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ ডিসেম্বর নগদে নিয়োগ করা প্রশাসকের কার্যক্রমের ওপর দুই সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল রোববার রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। একই বিষয়ে মোহাম্মদ আমিনুল হক নামে নগদের অপর এক পরিচালক আরেকটি রিট করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত একইভাবে রুল জারি করে। গতকাল রোববার সেই রুল খারিজ করে রায় দেয় একই আদালত। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় মোবাইলে আর্থিকসেবা পরিচালনার জন্য থার্ড ওয়েভকে কাজ দেয়। এরপর ২০১৯ সালে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে এই এমএফএস কোম্পানিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) বিকাশের পরই এখন নগদের অবস্থান। তবে প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন নিয়মণ্ডকানুন যথাযথভাবে মেনে চলেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও এতে সরকারের অংশীদারত্ব নেই। যথাযথ গ্রাহক তথ্য যাচাই (কেওয়াইসি) ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল গ্রাহকদের নিজস্ব গ্রাহক বানিয়ে ফেলার সুযোগ পায় নগদ। সরকারের সব ভাতা বিতরণেরও একচ্ছত্র সুবিধা পায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে সরকারি ভাতা পেতে নগদের গ্রাহক হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। নগদের মালিকানায় বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। নগদে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন তানভীর আহমেদ, নিয়াজ মোর্শেদ ও মারুফুল ইসলাম।