ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

ভাটারা থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ভাটারা থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তিনি কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সকালে নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রোববার নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ওই মামলায় তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আসামি করা হয়। ভাটারা থানার পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর নুসরাত ফারিয়াকে থানায় আনা হয়েছিল। তবে থানায় তাকে না রেখে পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নুসরাত ফারিয়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি সিনেমায় কাজ করেছেন। এ ছাড়া মডেলিং ও সঞ্চালনায়ও সক্রিয় তিনি। অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার নামে মামলা ছিল বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, নুসরাত ফারিয়ার নামে তদন্ত হচ্ছে। নির্দোষ প্রমাণ হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। যারা জুলাই গণহত্যায় প্রকৃত অপরাধী তারাই যাতে গ্রেপ্ত০ার হয়, কেউ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়- এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকল বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা।

স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে। আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাব। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকল আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রসঙ্গ টেনে এনে ফারুকী লেখেন, ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেকদিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এ ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নার্ভাসনেস থেকেই হয়তোবা এসব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

স্ট্যাটাসে ফারুকী আরও লেখেন, আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব- এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।

অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে আলোচনার মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন। গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।

পোস্টে হাসনাত বলেন, ‘সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনিকে দেশ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, শিরীন শারমিনকে রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বাসায় গিয়ে পাসপোর্ট করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসে এসেও শুরু হয়নি।’

তিনি বলেন, ইন্টেরিম, ৬২৬ জনের লিস্ট কোথায়? ৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন? এগুলো বিচার নয়, এগুলো হাসিনা স্টাইলে মনোযোগ ডাইভারশন।

নুসরাতের আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান বলেছেন, আমি আজকে নুসরাত ফারিয়ার পক্ষে বেইলের (জামিন) শুনানি করি। আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে- এ ঘটনার সময় নুসরাত বাংলাদেশে ছিলেন না। তখন তিনি কানাডাতে ছিলেন।

গতকাল সোমবার নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজিরের পর শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হুসাইন সিফাত।

তিনি বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেছেন- তিনি পালিয়ে যাচ্ছিলেন, বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয়। নুসরাত এর আগেও একাধিকবার দেশের বাইরে যাওয়া-আসা করেছেন। ২৫৮ জন আসামির মধ্যে আমার মক্কেল (নুসরাত ফারিয়া) ২০৭ নম্বর।

তিনি বলেন, আমি আজকে নুসরাত ফারিয়ার পক্ষে বেইলের (জামিন) শুনানি করি। আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, এ ঘটনার সময় উনি বাংলাদেশে ছিলেন না। উনি কানাডাতে অবস্থান করছিলেন। সেটার প্রমাণ হিসেবে আমরা পাসপোর্টের ডিপার্টচার ও অ্যারাইভাল যে কাগজটা আছে সেটা আদালতে পেশ করি। আদালত সেটা গ্রহণ করে এবং আদালত এটা পুলিশকে দেয়।

নুসরাতের আইনজীবী বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়েও তিনি দেশের বাইরে ও ভেতরে কাজ করেছেন। দেশের বাইরে কয়েকবার গিয়েছেন। পালাতে চাইলে তিনি বর্ডার ক্রস করে পালাতে পারতেন। বিমানবন্দরে যেতেন না।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে নুসরাতের কোনো যোগাযোগ হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আব্দুল হামিদের সঙ্গে নুসরাত সম্পৃক্ত নয়। এছাড়া আজ নুসরাতের সঙ্গে বিশেষভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। ফের ২২ তারিখে শুনানি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী যে, আদালত ন্যায়বিচারের পক্ষে রায় দেবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত