ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমেছে

এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমেছে

চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। অর্থবছরের মাঝপথে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকার শুল্ক, ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার মূসক ও ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ টাকার আয়কর আদায় করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের বাজেটে জুনে বাজেট বাস্তবায়নে গত জুনে বাজেট বাস্তবায়নে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার। এর মধ্যে এককভাবে এনবিআরকে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করসমূহের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ তেষট্টি হাজার পাঁচশত কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ছয়মাস শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রেকর্ড প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। শুধু ঘাটতি নয়, একই সময়ে গত অর্থবছরের চেয়েও রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। গত অর্থবছর একই সময় রাজস্ব আদায় হয় প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছর ছয়মাসে আদায় হয়েছে প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রার কারণে ঘাটতি বাড়ছে। এছাড়া জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি কারণে আদায় কমে গেছে। এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

অর্থাৎ ছয়মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ৫৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস-এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। আয়কর খাতে ছয়মাসে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে কাস্টমস খাতে প্রথমার্ধে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। আর ভ্যাট খাতে ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট খাতে প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় কমে যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে আদায় কমে গেছে। চলতি অর্থবছর আইভাস থেকে রাজস্ব আদায়ের হিসাব নেয়া হচ্ছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের কোন অফিস বাড়তি কোনো রাজস্ব দেখানোর সুযোগ নেই। গত অক্টোবর থেকে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা গতি বেড়েছে এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত