ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈদের পর রাজধানীর বাজারে ক্রেতা নেই

কমেছে শাকসবজির দাম
ঈদের পর রাজধানীর বাজারে ক্রেতা নেই

রাজধানীর বাজারগুলোয় ক্রেতা কম। নেই বললেই চলে। কারণ, ঢাকার জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে গেছে। এমন হাঁকডাকহীন বাজারে কমেছে শাকসবজির দাম। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে লেবু ও শসা।

মাংসের বাজারে মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা কমলেও আগের দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। ঈদের পরদিন সব বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে আজ থেকে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল বাজার ঘুরেও দেখা যায়, ক্রেতার আনাগোনা কম। তাই অধিকাংশ বিক্রেতাও অলস সময় পার করছেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ক্রেতার চাহিদা কম। তাই বেশির ভাগ পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম।

কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘রোজায় পটোল বিক্রি করেছি ১০০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ঢ্যাঁড়স ও বরবটির ঈদের আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। এছাড়া কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১২০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও পেঁপে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিছ লাউয়ের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা।’ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগে রোজার সময় লেবুর দাম হালিতে ১০ টাকা ও শসার দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি ছিল। কারওয়ান বাজারে কথা হলো ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছিরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘বাজারে তেমন কিছুর বাড়তি দাম চোখে পড়েনি। সব আগের মতোই আছে। তবে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। আমি এক কেজি বরবটি কিনেছি ৩০ টাকায়, আর এক কেজি ঢ্যাঁড়স কিনেছি ৪০ টাকা কেজি দরে।’ তবে টমেটোর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ টাকা। হাতিরপুলের কাঁচাবাজার সবজি বিক্রেতা আবদুল বাসির বলেন, ‘তিন দিন আগেও টমেটো ৩০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।’ সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদের পরদিন সব বাজারেই অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে আজ থেকে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। ক্রেতাদের বেশির ভাগই জানান, তারা খুব জরুরি প্রয়োজনে বাজারে এসেছেন।

অনেকে ঈদের ছুটিতে আত্মীয়স্বজনের বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ান। তাই সেই উপলক্ষে অনেকে বাজার করতে আসছেন। এখন তরমুজের মৌসুম। কিন্তু ঈদের তৃতীয় দিনের বাজার তরমুজের বেচাকেনাও থমকে গেছে। হাতিরপুল বাজারের তরমুজ বিক্রেতা আলিফ মুহাম্মদ বলেন, ‘রোজার সময় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি তরমুজ বিক্রি করেছি। তবে আজকে সকাল থেকে এখনো একটিও বিক্রি করতে পারিনি। পচনশীল পণ্যের বিক্রি করার চেষ্টায় দোকান খুলে রাখতে হচ্ছে।’ বাজারে গরু ও খাসির দাম আগের মতোই রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আগের দামে মুরগি বিক্রি হলেও মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সোনালি মুরগির কেজিতে দাম হাঁকা হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। অর্থাৎ সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকার কমেছে। অন্যদিকে গরুর মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ঈদের আগের দিনও এ দামেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল। তবে বাজারে গরু ও খাসির মাংসের ক্রেতা উপস্থিতি বেশ কম। রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মাংস বিক্রেতা খলিল আহমেদ বলেন, ‘ঈদের আগের ১০ দিন ২টি করে গরু বিক্রি করলেও আজকে এখন পর্যন্ত ২৫ কেজি মাংস বিক্রি করেছি।’

কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ক্রেতা কম থাকায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। কিছু মুরগির দোকান খুললেও অধিকাংশ এখনো বন্ধ। ঈদের আগে রমজানের প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মুরগি বিক্রি করলেও আজকে এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৭০টি। হাতিরপুল বাজারে কথা হয় সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা চিকিৎসক সবুর আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, কলাবাগান বাজার থেকে গরুর মাংস কিনেছেন ৮০০ টাকা ও কাতলা মাছ কিনেছেন ৪৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, ঈদের আগে যে দামে কিনেছিলেন, এখনো সেই দামে মাংস ও মাছ কেনা যাচ্ছে।

মাছের বাজারে ক্রেতার আনাগোনা মাংসের বাজারের তুলনায় অনেকটাই কম। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম, তাই দাম কিছুটা বাড়তি। নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। আর সাধারণ চাষের মাছের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। হাতিরপুল বাজারের মাছ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঢাকা থেকে নিজ নিজ গ্রামে অনেক মানুষ চলে যায়। তাই স্থানীয় পর্যায়ে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়। ঢাকায় তখন মাছও কম আসে। সেই কারণে দাম আগের থেকে কিছুটা বেড়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত