বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। বিপিএ নেতারা বলেন, খরচের তুলনায় বিক্রয়মূল্য কম থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের। শুধু গত ছয় মাসেই বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। অথচ খামারিরা তা বিক্রি করছেন ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। সোনালি মুরগির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা- উৎপাদন খরচ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। ডিমের ক্ষেত্রেও খরচ প্রতি পিস ১০ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৬ থেকে ৮ টাকায়। এর ফলে মুরগিতে প্রতি কেজিতে ৩০-৫০ টাকা এবং ডিমে প্রতিটি ২৩ টাকা করে লোকসান হচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন দেশে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন মুরগি ও ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে প্রান্তিক খামারিরাই উৎপাদন করেন প্রায় ৩ হাজার টন মুরগি ও ৩ কোটি পিস ডিম। গড়ে প্রতিদিন তাদের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কিছু অসাধু চক্র ও বড় কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ব্যবস্থার কারণে প্রান্তিক খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় বাজারে তারা কম দামে পণ্য ছাড়তে পারছে, যা সাধারণ খামারিদের বাজার থেকে ছিটকে দিচ্ছে।
অথচ ভোক্তারা দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না। বিপিএ জানায়, প্রতিদিন দেশে শত শত খামার বন্ধ হচ্ছে। একটি খামার বন্ধ মানে শুধুমাত্র উৎপাদন কমে যাওয়া নয়- একটি পরিবারের আয়ের উৎস হারানো, একজন যুবকের বেকার হয়ে যাওয়া এবং একটি সংসারের জন্য দুঃসহ বাস্তবতা তৈরি হওয়া। অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন, কেউ কেউ দেউলিয়া পর্যন্ত হয়ে গেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সংকট মোকাবেলায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের টিকিয়ে রাখতে ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে বিপিএ। একই সঙ্গে তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে—জাতীয় পোলট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি, উদ্যোক্তা আইডি কার্ড প্রদান, প্রান্তিক খামারিদের স্বল্পসুদে জামানতবিহীন ঋণ, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং সুষ্ঠু কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নীতিমালা প্রণয়ন। সংগঠনটি মনে করে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই খাত রক্ষা করা সম্ভব নয়। ডিম ও মুরগি দেশের প্রোটিনের প্রধান উৎস হওয়ায় সরকারকেই এই খাতকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। তারা আশাবাদী, সরকার তাদের এই সংকটময় মুহূর্তে পাশে দাঁড়াবে এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।