বাংলাদেশের জার্সিতে হামজা চৌধুরীর অভিষেকের পর প্রবাসী প্রচুর ফুটবলারের আগ্রহ বেড়েছে। সেই পথে হেঁটে সামিত সোম, ফাহমিদুল ইসলাম, কিউবা মিচেলের পর আলোচনায় আছেন জায়ান হাকিমও। প্রবাসী ফুটবলারদের সুযোগ করে দিতে ‘বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার।’ নামে ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে গত ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে আসা ৪৮ জন প্রবাসী ফুটবলার অংশ নিয়েছেন। তিন দিনের ট্রায়াল শেষ হয়েছে গত সোমবার। তবে কারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তা জানানো হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু ট্রায়ালের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তবে পরিষ্কার করে বলেননি কারা কারা ট্রায়ালে টিকে গেছেন। সামনে বয়সভিত্তিক দলের প্রস্তুতির আগে আবারও সবকিছু দেখে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের ডাকার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে প্রবাসীদের অপেক্ষার প্রহর বাড়ছেই।
তার কথা, ‘আমরা ট্রায়ালে আসা প্রত্যেক ফুটবলারকে নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করব। আমরা চোখে দেখেছি, আবার ভিডিও করা হয়েছে। সেগুলোও পর্যবেক্ষণ করা হবে। আমাদের সামনে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট রয়েছে। এখানে ট্রায়ালে আসা অনেকেরই বয়সসীমা নেই। এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্টের প্রস্ততি জুলাই মাসের শেষ দিকে শুরু হবে। সেখানে হয়তো ফুটবলারদের দেখা যেতে পারে।’
তিনি যোগ করেন, ‘এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। যাদের বয়স মাত্র ১৮-১৯। তাদের উন্নতির অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখব। সামনে আমাদের বয়স ভিত্তিক ক্যাম্পে কোচরা এই ট্রায়ালের তথ্য বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়দের দেখবেন।’ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু বাদে অন্য সব বিচারকরা এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত ট্রায়ালে ৪৯ জনের মধ্যে ২৫ জনের বয়স উনিশের বেশি। এদের মধ্যে কয়েকজন ফুটবলার যুব এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইয়ে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্টের বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ভিয়েতনামে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবার ফিফা উইন্ডোও রয়েছে। সিনিয়র জাতীয় দলের অনেক ফুটবলারের বয়স ২৩ এর কম। তাদের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের জন্য বিবেচনা না করলে আরও বেশি সংখ্যক ফুটবলার প্রয়োজন পড়বে। ফলে জুলাই থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত এক মাসের প্রাথমিক ক্যাম্পে ট্রায়ালে আসা একাধিক প্রবাসী ফুটবলার থাকতে পারেন। খেলোয়াড় নির্বাচনের বিষয়ে সাইফুল বারীর কথা, ‘সবাই বাংলাদেশি। কোয়ালিটির বিচারেই দলে আসার ও খেলার সুযোগ পাবে। আমার নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করব। একজনও যেন অবিচারের শিকার না হন। তারা সবাই আন্তরিকতা নিয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসেছেন। এজন্য পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই আবারও।’
এদিকে ট্রায়াল দিতে আশা প্রায় অর্ধশত কিশোরের ভিড়ে একজন আলাদা নজর কাড়তে পেরেছেন আলাদা করে- জুনিয়র দলের বিতোসোক চাকমা। লেফট উইং দিয়ে বারবার আক্রমণে উঠেছেন। এরপর একটা গোলও করেছেন। বিতোসোক চাকমার শেকড় বাংলাদেশেই শুধু নয়, তার মামা বিকাশ বরুন দেওয়ান জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার। এমন স্কিল তাই যেন বংশ পরম্পরায় পাওয়া। বীতশোক চাকমা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ট্রায়ালে গোল করেছেন। টিটুর মূল্যায়ন, ‘বীতশোক এখানে গোল করেছে। ওর স্টাইল, বল ধরার ব্যাপার, দৌড়ানো, টেকনিক্যাল স্কিল খুবই সুন্দর। কিন্তু যখন আমরা ওদেরকে ক্যাম্পে ডাকবো, তখন ওদের আসল ব্যাপারটা বেরিয়ে আসবে। ওই স্ট্যান্ডার্ডে ওরা কীভাবে বিহেভ করে, সেটা বেরিয়ে আসবে।’ ট্রায়ালে আসা ফুটবলারদের অনেকে ইউরোপ, আমেরিকায় বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। বাংলাদেশের ক্লাবগুলোই বয়সভিত্তিক দলের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে চায় না।