ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবার জন্য উন্মুক্ত চট্টগ্রামের জাতিসংঘ পার্ক

সবার জন্য উন্মুক্ত চট্টগ্রামের জাতিসংঘ পার্ক

দুটি সুইমিংপুল নির্মাণ, পার্ক ঘিরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব, সুইমিংপুল দুটি ভাঙা, নতুন প্রকল্প গ্রহণ- সব মিলে পেরিয়ে গেছে এক যুগ। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে আবার সবার জন্য খুলে দেয়া হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জাতিসংঘ পার্ক। নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে তিনমাস আগেই।

কিন্তু পার্ক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে অপেক্ষা। গত ৩ জানুয়ারি নবনির্মিত ‘জাতিসংঘ পার্ক’ উদ্বোধন করেন শিল্প এবং গৃহায়ণ গণপূর্তবিষয়ক উপদেষ্টা আনিসুর রহমান। গেল বছর জুলাই মাসে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শহীদদের অবদানকে স্মরণ রেখে এ পার্কের নামকরণ করা হয় ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’। নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর প্রাণকেন্দ্রের একটি পার্ক ঘিরে উন্নয়নে এভাবে এক যুগ পার হওয়া ‘খুবই দুঃখজনক’। পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে এমন ‘টানাপড়েন’ নজিরবিহীন। এতে শিশু-কিশোররা বঞ্চিত হয়েছে চরমভাবে। জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রে ৬৯ একর আয়তনের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বে।

১৯৫৪ সালে আবাসিক এলাকাটির জন্য জমি বরাদ্দ দেয় সংস্থাটি। এর মাঝে ২ দশমিক ১৭ একর আয়তনের ওই উদ্যানের নাম শুরুতে ছিল ‘পাঁচলাইশ পার্ক’। ১৯৮৮ সালে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র থাকাকালে গণপূর্ত অধিদপ্তর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য পার্কের দায়িত্ব দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হাতে। ২০০২ সালে সে সময়ের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পার্কের নাম দেন ‘জাতিসংঘ পার্ক’।

পরের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে বেসরকারি এক কোম্পানির কাছে পার্কটি ইজারা দিতে চাইলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তারপর সিটি কর্পোরেশন ও গণপূর্তের দ্বন্দ্বে আরো কয়েক বছর গড়িয়ে যায়। তখন থেকে পার্কটি অব্যবহৃত ছিল। এভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় পার্কের ভিতর জমেছিল আবর্জনা। মাঠজুড়ে ছিল বড় বড় গর্ত। এক পর্যায়ে পার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। জানতে চাইলে গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান খান (সার্কেল-১) বলেন, পার্কের নির্মাণকাজ শেষ। গত ২৮ নভেম্বর উপদেষ্টা দেখে গেছেন। পার্ক চালু করতে জনবল অনুমোদন চেয়ে আমরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তিন শিফটে চারজন করে মোট ১২ জন গার্ডের প্রয়োজন হবে। নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি আশিক ইমরান জানান, এটি খুবই দুঃখজনক যে প্রায় গত এক যুগ পার্কটি ব্যবহার উপযোগী ছিল না।

এত বড় শহরে শিশু-কিশোরদের জন্য একটি পার্কও এখন খোলা নেই। সিটি কর্পোরেশন যে সুইমিং পুল নির্মাণ করেছিল, সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। পার্ক ওভাবে হয় না। পার্কে হাঁটাচলা ও নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য খোলা জায়গা থাকতে হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নকশাটি ভালো হয়েছে। দ্রুত জনবল নিয়োগ করে এটি সবার জন্য খুলে দেয়া উচিত। পাশাপাশি পার্কের ভেতরে কোনো দোকান বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন পার্কের ভেতরে যেন দোকান বরাদ্দ না দেয়া হয়। সবশেষ ২০২২ সালে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির আধুনিকায়নে ‘জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান’ প্রকল্পটি হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন শেষে মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা।

পার্কের চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় ২৯৪০ বর্গফুট হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে)। স্থাপন করা হয়েছে বসার জন্য ৪৪টি বেঞ্চ, দুটি প্রবেশপথ, শিশু-কিশোরদের খেলার সরঞ্জাম, ব্যয়ামের জন্য হরাইজন্টাল বার ও মেটাল পেরগোলা, ড্রেনেজ সিস্টেম, ডাস্টবিন, টয়লেট ব্লক, আলোকায়নের জন্য কম্বাইন্ড লাইট ও স্ট্রিট লাইট, সিসিটিভি ক্যামরা, সোলার পাওয়ার সিস্টেম ও বজ্রনিরোধক। এছাড়া পার্কজুড়ে নতুন করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ঘাস লাগানো হয়েছে। এতে এক সময়ের পরিত্যক্ত হয়ে পড়া পার্কটি আবার যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। দুটি সুইমিংপুল নির্মাণ, পার্ক ঘিরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব, সুইমিংপুল দুটি ভাঙা, নতুন প্রকল্প গ্রহণ- সব মিলে পেরিয়ে গেছে এক যুগ। অবশেষে আবার সবার জন্য খুলল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের এই উদ্যানটি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত