ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অবৈধ দখল-বাঁধে একসময়ের প্রমত্তা সূতি এখন মরা নদী

অবৈধ দখল-বাঁধে একসময়ের প্রমত্তা সূতি এখন মরা নদী

সময়মতো ড্রেজিং না করা, অপরিণামদর্শী লোকজন কর্তৃক অবৈধভাবে দখল করে মাটি ফেলে ফসলের জমি কিংবা স্থাপনা তৈরির মহোৎসব, উৎস মুখে বাঁধ ও অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট তৈরি ইত্যাদির কারণে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে এবং চর পড়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের সূতি নদী এখন পানি শূন্য হয়ে শুকিয়ে গেছে। নদীর তলদেশে এখন আবাদ হচ্ছে ফসলের। এ কারণে সূতি অববাহিকায় সার্বিক জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নদীর তীরে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা সনাতনী পদ্ধতিতে সেচ, নৌ-চলাচল, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র মারাত্মকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ভারসাম্য দ্রুত নষ্ট হচ্ছে এবং নাব্য কমে যাওয়ায়, চলতি বোরো মৌসুমে সেচকাজ দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি পানিশূন্য সূতিতে মাছ শিকার করতে না পেরে শত শত জেলে বেকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। হঠাৎ করে নদীর পানি শুকিয়ে যায়। তখনই পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর জীবনে নেমে আসে সীমাহীন দূর্ভোগ। অথচ গুরুত্বপূর্ণ সূতি নদীর দিকে আজ পর্যন্ত কেউ নজর দেয়নি। সংযোগ স্থাপনের জন্য খনন কাজে যে অর্থ ব্যয় হবে তা দুই বছরেই সংকুলান হয়ে যাবে। কারণ নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার একর জমিতে উচ্চফলনশীল ধান, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান কৃষিপণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। কারণ নদীর পানি দিয়ে সেচ দেয়া হলে যে কোনো ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা হয়ে তাড়াইল উপজেলার দাউদপুর-বাঁশাটি থেকে নরসুন্দা নদীতে সূতি মিলিত হয়েছে।

প্রতিবছর শত শত একর আবাদি জমি বর্ষা ও নদী ভাঙনের ফলে বালুর আস্তরণে ঢেকে যায়, ফলে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। মিঠা পানির মাছের অধিকাংশ প্রজাতির কীটপতঙ্গ যেমন, কেঁচো ও ব্যাঙ ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সাহারায় যে প্রক্রিয়ায় মানুষ ও প্রাণি বসবাসের অযোগ্য বনভূমিতে পরিণত হয়েছিল, সূতি অববাহিকা এখন ঠিক সেই দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সূতির অধিকাংশ শাখা-প্রশাখা, খাল-বিলসহ এবং জলাশয়গুলো শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। আশংখা করা হচ্ছে, এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে এ অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সরেজমিনে সূতির বিভিন্ন অংশে দেখা যায়, সূতি নদীর যৌবন আর নেই। পানির উতাল-পাতাল ঢেউ আর নেই। চোখেই পড়ে না এক সময়কার সূতির সেই ভরা যৌবন। এক সময়ের খরস্রোতা সূতি নদী শুকিয়ে ক্ষীণ হয়ে গেছে। জেগে উঠেছে বড় বড় চর। যতদূর চোখ যা, শুধু ধু-ধু বালু চর চোখে পড়ে। পানির অভাবে নদী তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সূতি নদীর চরে আশপাশের কৃষকরা ইরি-বোরোসহ রবিশস্য চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাড়াইল উপজেলাবাসী জানিয়েছেন, বছরের পর বছর সূতি নদীর ড্রেজিং না হওয়ায় নদীকেন্দ্রীক উভয় তীরের স্বল্প আয় সম্পন্ন মানুষ ও জেলেদের মাছ ধরে জীবন নির্বাহ করার বিষয়টি বন্ধ হয়ে গেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়াতে আজ সব নীরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। যে সূতি নদী পার হওয়ার সময় একদিন বড় বড় নাবিকেরও বুক কেঁপে উঠত, আজ সেই নদী ছোটদের খেলার সাথি। সংস্কারের অভাবে সূতি নদী আজ খেলার মাঠ ও আবাদ জমিতে পরিণত হতে চলেছে। নদীর তীরবর্তী এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি নদীটি খনন করে হারিয়ে যাওয়া নাব্য ফিরিয়ে আনা হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত