ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সর্জান পদ্ধতিতে কৃষির নতুন সম্ভাবনা

সর্জান পদ্ধতিতে কৃষির নতুন সম্ভাবনা

ভোলার বিস্তৃর্ণ নিচু চরাঞ্চল একসময় কৃষকদের জন্য বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি বছরের সাত থেকে আট মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ থাকত, ফলে কৃষকরা তাদের জমিতে কিছুই চাষ করতে পারতেন না। ফলে সেগুলো পতিত হয়ে পড়ে থাকত এবং কৃষকরা নানা ধরনের আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতেন। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষি বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে কারিগরি সহযোগিতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে এক নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলন করেছে, যার নাম সর্জান পদ্ধতি। সর্জান পদ্ধতি হলো একটি আধুনিক কৃষি কৌশল, যেখানে জমির কিছু অংশ উঁচু করে সেখানে সবজি এবং অন্যান্য ফসলের চাষ করা হয়, আর নিচু অংশে পানি ধরে রেখে মাছ চাষ করা হয়। এর ফলে একই জমি থেকে দ্বিগুণ উৎপাদন পাওয়া যায়, যা কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকরা তাদের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছেন। বর্তমানে ভোলার নিচু চরাঞ্চলে এই পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার ঘটছে এবং কৃষকরা নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম ইলিশার সদুর চর এলাকার কৃষক ইউসুফ বলেন, সর্জান পদ্ধতিতে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি যেমন অধিক পরিমাণ শাক সবজি উৎপাদন করতে পারছেন, তেমনি সবজির পাশাপাশি মাছ চাষের মাধ্যমে তার আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক মনির বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিন তারা হতাশ হয়ে ছিলেন, কিন্তু সর্জান পদ্ধতির মাধ্যমে এখন নতুন আশার আলো দেখছেন। এই পদ্ধতির ফলে জমির উর্বরতা বজায় থাকছে এবং এর দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারও নিশ্চিত হচ্ছে। কৃষক ইউসুফ মনিরদের দলের সফলতা দেখে তাদের পাশের জমির কৃষকরাও এখন সর্জান পদ্ধতিকে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষিবিদ মুরাদ হাসান চৌধুরী বলেন, সর্জান পদ্ধতি কৃষকদের জন্য এক ধরনের আশীর্বাদ। এটি শুধু উৎপাদন বাড়াচ্ছে না, বরং কৃষকদের স্বনির্ভর করে তুলছে। কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার ফলে এই প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ঘটছে, যা কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ কামরুল হাসান বলেন- সরকারি ও বেসরকারি পর‌্যায়ে সঠিক পরিকল্পনা ও সহযোগিতা থাকলে সর্জান পদ্ধতির আরো প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে। এর ফলে উপকূলীয় কৃষিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে, যা শুধু ভোলার কৃষকদের নয়, দেশের অন্যান্য চরাঞ্চলের কৃষকদেরও স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একসময় যেখানে জলাবদ্ধ জমি ছিল এবং কৃষকদের ছিল হতাশা, আজ সেখানে সর্জান পদ্ধতির মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। কৃষকদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে এবং তাদের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে। সর্জান পদ্ধতির প্রয়োগে ভোলার চরাঞ্চলে কৃষিতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আছে, যা অন্য অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করার সম্ভাবনা আছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত