পানিবদ্ধতা ও অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে বরগুনায় এডিস মশার বিস্তার করেছে। হুহু করে বেড়ে গেছে মশার বংশবিস্তার। সারাদেশের চতুর্থাংশ ডেঙ্গু রোগী হওয়ায় বরগুনা এখন ডেঙ্গুর হটস্পট জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বরগুনার বিভিন্ন জনপদে লবণাক্ত পানির কারণে অনেক বাসিন্দা বসতবাড়িতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখেন। জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। পানিবদ্ধতা ও যত্রতত্র ঝোপঝাড়ের কারণে মশার ব্যাপক বিস্তার ঘটে উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। যার ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বরগুনায়।
চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ৮৬১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। মে মাসে এ সংখ্যা ছিল ৭৮৪ জন। এপ্রিল মাসে ১৮০ জন। গত দুই মাসে মোট ভর্তি ছিল ৯৯৪ জন। অথচ জুনের অর্ধেকে সেই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে রোগীর ভিড়ে। জেলার মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯০৩ জনে। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ২১৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৭৯ জন, ছাড়পত্র পেয়েছে ১০৮ জন, আর মোট সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছে ১ হাজার ৬৮৯ জন। এছাড়া চলতি মাসে এখন পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। যার মধ্যে গত রোববার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত একজন সিনিয়র নার্সের ৩ বছরের একটি শিশুর মৃত্যু বরগুনাবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৯৯৪ জনের। তবে গত দুই সপ্তাহে ৯ জন মারা গেছে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। এর বাইরেও ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বরগুনার আরও অন্তত ৯ জন। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগী জাকিয়া সুলতানা বলেন, আমাদের অসচেতনতাজনিত কারণেই এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার মতো একটা ক্ষুদ্র প্রাণীর কাছে আমরা অনেকটাই অনিরাপদ। অতি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে ডেঙ্গুর কারণে শুধু মৃত্যুর খবরই শুনতে হবে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ১৯২ জন ডেঙ্গু রোগী। রোগীরা মেঝেতে, লিফটের সামনে, করিডোরে এমনকি সিঁড়ির গোড়াতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিটি রোগীর সঙ্গে থাকে ৩-৪ জন স্বজন। ফলে হাসপাতালে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছি। রোগী ও রোগীর স্বজনদের ভিড়ে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। তবে অধিকতর অসুস্থ অনেক রোগী বরিশাল পাঠানো হচ্ছে কিন্তু টাকার অভাবে যেতে না পারার ফলে এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি।’
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রেজোয়ানুল আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত ১০ জন ডাক্তার ও ১০ জন নার্সের বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত তিনজন ডাক্তার যোগ দিয়েছেন। আশা করছি বাকিরা ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে যোগদান করবেন।