ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কালিয়াকৈরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আট দপ্তরের কার্যক্রম

কালিয়াকৈরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আট দপ্তরের কার্যক্রম

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তিন তলা ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড বের হয়ে আছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল, বিমেও ফাটলের দাগ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি। যেকোনো সময় মাথার ওপর ছাদ ধসে পড়তে পারে এমন আতঙ্কের মধ্যে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ৮ দপ্তরের কার্যক্রম। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই দ্রুত নতুন ভবনের দাবি জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এলাকাবাসী, সেবা প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার একটি তিনতলা ভবনে উপজেলা হিসাব রক্ষক, মৎস্য, সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক, যুব উন্নয়ন, সমবায়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস এই ৮টি দপ্তরের কার্যক্রম চলে আসছে। কিন্তুদীর্ঘদিনের পুরাতন এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওই ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট-বড় পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদের রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল, বিমেও রয়েছে ছোট বড় ফাটল। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পড়ছে পানি।

যেকোনো সময় মাথার ওপর ছাদ ধসে পড়তে পারে এমন আতঙ্কের মধ্যে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে দপ্তরগুলোর কার্যক্রম। বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সরকারি সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার বিকালে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলা ভবনে উপজেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরের একটি অফিস কক্ষে হঠাৎ ছাদের বড় পলেস্তারা খসে সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনের টেবিল ও যন্ত্রপাতি ওপর পড়ে। এতে টেবিলসহ কিছু আসবাবপত্রের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই খসে পড়া পলেস্তারার কিছু অংশ ছিটকে অফিস সহকারী তমিজুর রহমানের হাতে পড়ে। এসময় তিনি ভবন ধসে পড়ার আতঙ্কে দৌড়ে অফিস থেকে নিচে নেমে আসে।

শুধু ওই অফিস সহকারী নয়, ওই ভবনের অন্যান্য দপ্তরের উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দৌড়ে নিচে নেমে যায়। এর আগেও কুরবানী ঈদের ছুটি শেষে ২য় দিনে তৃতীয় তলায় ছাদের পালেস্তা খসে সিড়ির ওপর পড়ে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ওই ৮ দপ্তরের ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় তারাসহ অসংখ্য সেবা প্রার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরকারি সেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। এছাড়াও পাশেই উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত পুরাতন দ্বিতীয় তলা ভবন রয়েছে। ওই পুরাতন ভবনের কিছু অংশ কেটে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই ভবনের এক তলার ছাদ ও বিম খসে খসে পড়ছে। সে জরাজীর্ণ ভবনটিও যেকোনো সময় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিদিন প্রায় শত শত মানুষ উপজেলার ১৭টি দপ্তরে যাতায়াত করে থাকেন। চলাচলরত সেবা গ্রহীতাসহ অন্যান্য লোকজন যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

ওই উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সহকারী বিএম তমিজুর রহমান বলেন, ওইদিন হঠাৎ করেই আমাদের অফিসের ছাদের পলেস্তারার একটি বড় অংশ খসে পড়ে। এর কিছু অংশ আমার হাতের ওপর পড়ে। অল্পর জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। পরে আমিসহ অন্যান্য দপ্তরের স্যাররাও আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে যাই। কিন্তু অফিসে এসে ছাদের দিকে তাকালেই ভয় হয়। কখন যেন মাথার ওপর ছাদ ধসে খসে পড়ে। সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী মুনসের আলী বলেন, আমাদের অফিসের ভবনটি এখন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়াও পাশের পুরাতন উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই ওই ভবনের ছাদ ও বিমের বড় পলেস্তারা খসে পড়ে। অল্পের জন্য আমার ওপর পড়েনি। সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, ওইদিন বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমার টেবিলের ওপর ছাদের বড় পলেস্তারার অংশ খসে পড়ে। এখনও আমার মাথার ওপর ছাদ ও দেওয়ালে আরো ফাটল আছে। আতঙ্কে আমার টেবিলে বসতে পারছি না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কিভাবে অফিস করবো? মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শিগগিরই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা উচিত।

শুধু এরাই নয়, বিকল্প না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যেকোনো সময় ভবন ধসে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কবে নাগাদ এসব ভবন ভেঙে ফেলা হবে? সেটা ওই ৮ দপ্তরের সবারই অজানা। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই তালিকা করে অতিদ্রুত পুরনো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে নতুন করে ভবন নির্মাণ করার দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাছেদ জানান, আজকেই এখানে যোগদান করেছি। তবে খুব দ্রুতই খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহামেদ জানান, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে ওই ভবনে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে যাতে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করেন তার জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত