হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, সারাদেশে বহু ছাত্র, জনতা এবং পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন। এই অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে, জনমতের বিপক্ষে গিয়ে কখনও টিকে থাকা যায় না এবং জনগণের জন্য প্রাপ্য সেবা প্রদানও সম্ভব হয় না। একটি দেশের স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি না থাকলে কখনও উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, আর জনজীবন মুখ থুবড়ে পড়ে। গতকাল রোববার নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে ৫১তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ব্যাচের সমাপনী কুচকাবাজে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবীন কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে রাজারবাগে আমাদের পূর্বসূরিরা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন পশ্চিমা হায়নারা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। সেই সময় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়ে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আমি আজ সেই শহিদ পুলিশ সদস্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। পূর্বসূরিদের অভূতপূর্ব দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগকে ধারণ করে, তোমরাও বাংলাদেশ পুলিশের অকুতোভয় সদস্য হিসেবে দেশের যেকোনো সংকট ও সংঘাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেবার ব্রতে অবিচল থাকবে এটাই আমার বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ হলো পুলিশ। এটি সবসময় সরকারের দৃশ্যমান অবয়ব হিসেবে বিবেচিত। আমরা বিগত সময়ে দেখেছি, পুলিশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে অন্যায়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। এর ফলে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমের প্রতি জনমানুষের আস্থা ও সহানুভূতির ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার প্রতিফলন আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ করেছি।
বর্তমান সরকার পুলিশে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশকে প্রচলিত ধারণার ঊর্ধ্বে একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ, জনবান্ধব ও মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই সংস্কার বাস্তবায়িত হলে আমরা আশা করছি, অতীতের ত্রুটি ও বিচ্যুতিগুলোকে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করে উত্তরণের পথ খুঁজে পাব। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সেবা দেশের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারব। আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য, আদর্শ ও জনজীবনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে, আমরা মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। ৫১তম ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ১০৪১ জন কনস্টেবল অংশগ্রহণ করেন। শেষে মাঠ ও শরীরচর্চা বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী ও সববিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীর মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।