প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরেও জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বা কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে নাকাল সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে কারখানার মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও পণ্য পরিবহনে গাড়ির চালকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। শিল্প ইউনিটেও পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবেশ করে। এতে ক্ষোভে ফুঁসছেন কারখানার মালিক ও শিল্প উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা দ্রুত বিসিক এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজব্যবস্থাসহ অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে নগরীর অশোকতলা এলাকার ৫৪ দশমিক ৩৫ একর জায়গা নিয়ে ‘কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরী’ গড়ে ওঠে। এখানে ১৪২টি শিল্প প্লটের মধ্যে আটা, অটো রাইস, মুড়ি, ময়দা, বিস্কুট, মিষ্টি, চানাচুর, সরিষা, ওষুধ, জাল, ক্যাবল, সুতা, অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল তৈরিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের ১৩১টি কারখানা চালু আছে। এসব কারখানায় ৭ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। এখানে বছরে প্রায় চারশ’ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হয় এবং এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়। প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যানে করে বিসিকের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে নানা সমস্যার কারণে এখানে কিছু কারখানা রুগ্ন এবং বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। কথা হয় বিভিন্ন শিল্প মালিকদের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, বিসিকের অভ্যন্তরীন সড়ক ও ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। এমনিতে সামান্য বৃষ্টি হলে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এখন বর্ষাকাল চলছে, তাই দুর্ভোগ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
বৃষ্টির পানি ড্রেন উপচে শিল্পকারখানার ভেতরেও ঢুকে পড়ে। অধিকাংশ পাকা সড়কের পিচণ্ডইট সুরকি উঠে কাঁচা সড়কে পরিণত হয়েছে। গর্ত ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। বিসিক সূত্র জানায়, এ শিল্পনগরীতে ১০ হাজার ৭৫০ ফুট সড়ক আছে, এর মধ্যে ৫ হাজার ফুট সড়ক ভাঙাচোরা। ২১ হাজার ৫০০ ফুট ড্রেন আছে, এর মধ্যে ১০ হাজার ফুট ড্রেন খারাপ। বিসিকের পাবন গ্রুপ, ফরিদ গ্রুপসহ কয়েক কারখানার কর্মকর্তারা জানান, পণ্য সরবরাহ ও কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে খুবই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
আজাদ ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাস্তাঘাটের সমস্যার কারণে বিসিকে শিল্পকারখানা স্থাপনে অনেক উদ্যোক্তা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ সমস্যার বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, তারা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। কুমিল্লা ফ্লাওয়ার মিলসের কর্মকর্তা সৈয়দ গোলাম কাদের জানান, অধিকাংশ সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী, হেঁটেও চলাচল করতে কষ্ট হয়। মালামাল নিতে আসা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের চালকরা ভোগান্তিতে পড়েন। সড়কের গর্তে পড়ে যানবাহন আটকে যায়। তারা বিসিকের সড়কগুলো সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানান।
কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন সাংবাদিকদের জানান, নগরীর বিসিক শিল্প এলাকাটির আশপাশের এলাকার চাইতে অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি এখানে প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই আমরা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিসিকের রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়নে কাজ করছি। এখানকার সড়ক মেরামত ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলে আশা করি এসব সমস্যা থাকবে না।