ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুন্সীগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ

মুন্সীগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ

অবশেষে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শহরের যানজট নিরসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষষে উদ্যোগ গ্রহণ করাকে পৌরবাসী সাধুবাদ জানিয়েছে। শহরে বেশিরভাগ সময়ে যানজট থাকাতে পৌরবাসী ছিল ক্ষুদ্ধ। তবে পৌরবাসী এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে যেসব মিশুক ও অটো রিকশা বা ইজিবাহক চলাচল করছে তাদেরকে লাইসেন্সের আওয়াতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে মাইকিং করা হয় শহরজুড়ে তখন সময় বেঁধে দেওয়া হয়ে ছিল ২৩ জুন পর্যন্ত। এখন আবারও মাইকিং করা হয় সেই সময় বর্ধিত করে ৩০ জুনের মধ্যে এ সুযোগে সুবিধা নিতে পারবে গাড়ির মালিকরা। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২২০০ জন গাড়ির মালিক পৌরসভার নির্ধারিত ফরম ১০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে পূরণ করে ফরম জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ শহরে অবকাঠামো অনুযায়ী এ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে প্রায় ৩ হাজারের মতো গাড়ি। কিন্তু শহরে নিত্য দিন যানবাহন চলাচল করছে ১০ হাজারের মতো গাড়ি। তবে নারায়ণগঞ্জ থেকে নাকি সবচেয়ে এ ধরনের যানবাহন এ শহরে বেশি প্রবেশ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাতেই নাকি সবচেয়ে যানযটের প্রধান কারণ। এটি প্রতিহত করতে মুক্তারপুর সেতু এলাকায় চেক পোস্ট বসানো হতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে এখানে নানা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ শহরের পূর্বদিক ছাড়া ৩ দিকে রয়েছে বর্ডার ইউনিয়নের রাস্তা। সেগুলো হচ্ছে উত্তরে পঞ্চসার, পশ্চিমে মহাকালী আর দক্ষিণে হচ্ছে চরকেওয়ার। এসব ইউনিয়নের সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য আরও ইউনিয়ন। সেসব ইউনিয়ন থেকে শহরে প্রতিদিন এ ধরনের যানবাহন প্রবেশ করছে কোনো বাঁধা ছাড়াই। তাতে শহরের যানজট কয়েক দফা বেড়ে যাচ্ছে বলে এমনটি ধারণা করছেন কেউ কেউ। একাদিক পৌরবাসী জানান, এ শহরে প্রধান যানজট লাগার স্থান গুলো কোথায়।

তা আগে চিহ্নিত করতে হবে। তার পরে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত অফিস টাইমে বেশিরভাগ সময়ে নির্ধারিত স্থানগুলোতে যানজট দেখা যায়। অন্য সময়ে সেখানে সেই পরিমাণে যানজট দেখা যায় না। যারা এ ধরনের যানবাহনের চালক তারা কোনো ধরনের ট্রাফিক আইন সর্ম্পকে কোনো কিছুই জানে। তাদের সেই অজ্ঞতার কারণেও এ শহরে যানজট লাগার মধ্যে একটি কারণ বলে অনেকেই মনে করছেন।

এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে চালক ওভার টেকিং করে যানবাহন চালায়। এ কারণেও শহরে যানজট বাড়ছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা যানবাহন চলাচলে যে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে তাতে শহরে অন্য এলাকার ঐ ধরনের যানবাহন বাঁধার মুখে পড়বে। তাতে এখানকার কোনো যানবাহন কোনো কারণে অন্য স্থানে গেলে তারাও বাঁধার মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শহরের বাজারের মসলা ভাঙানোর দোকান থেকে কাচারী চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তা দখল করে দুই পাশে ভ্যানগাড়ি দোকান করা হচ্ছে। এখানকার ফলপট্টি এলাকাতে তাদের দোকানের সামনের রাস্তা দখল করে ফল বেচা কি না হচ্ছে। এর ফলে এখানে যানজট লাগার অন্যতম কারণ বলে সবাই মনে করছেন। অথচ এখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এটি সরিয়ে নেওয়া হলে এখানকার যানজট না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ যানবাহনকে কেন্দ্র করে শহরে শতাধিক গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। শহরে যানবাহন সীমিত করা হলে ঐসব গ্যারেজের মালিকরা আর্থিক সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাত বা আট বছর আগে শহরে যানবাহন মুক্ত করার লক্ষ্যে গাড়িতে হলুদ রং লাগানো হয়। তখন প্রতিটি গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ১৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়। সেইসব গাড়িতে আবার নাম্বারও দেয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাতে নেই। সাবেক মেয়র হাজী ফয়সাল বিপ্লব এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীবাড়ী থেকে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এ ধরনের যানবাহন শহরে প্রবেশ করে সারাদিন তারা যাত্রী আনা নেওয়ার ব্যবসা করে থাকে। এ কারণে শহরে বেশিরভাগ সময়ে এ ধরনের যানবাহন ভরপুর দেখা যায় বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ কারণে শহরে যানজট লাগার একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা অটো মিশুক ও সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য আমরা ৫০ টাকার একটি ফরম মালিকদের মাঝে দিচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ সদস্য আমরা পেয়েছি। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা শহরের যানজট নিরসনের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা পজিটিভ।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী অফিসার সিকদার মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, এখানে মিশুকের গাড়ি থেকে বার্ষিক ১৮০০ টাকা ও ইজিবাইক গাড়ী থেকে ৩৫০০ টাকা নেওয়া হবে। তাদেরকে ডিজিটাল লাইসেন্স দেওয়া হবে। পৌরসভার সীমান্ত এলাকার যেসব ইউনিয়ন রয়েছে তাদেরকে এ লাইসেন্স দেওয়া হবে সীমিত আকারে। যাতে তারা শহরে যানবাহন নিয়ে আসতে ও যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে তাদের সীমানায় পৌরসভার যানবাহন প্রবেশ করলেও কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দূরের ইউনিয়নগুলো এ সুযোগ পাবে না।

এ লাইসেন্স প্রদানের পরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি স্থানে দুই শিফটে ১০ জনের মতো এ কাজের জন্য লোক নিয়োগ করা হবে। তাদেরকে প্রতিমাসে মোটা দাগের বেতন দেওয়া হবে যানজট থেকে শহরকে মুক্ত রাখার জন্য। লাইসেন্স প্রাপ্তির টাকা এ খাতে খরচ করা হবে। এতে কিছু লোকের কর্মস্থান হবে। আর অন্যান্য স্থানে মাঝে মধ্যে জটিকা পরিদর্শন করা হবে শহরের যানজট মুক্ত ঠিক রাখার জন্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত