যমুনা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন কাঁধে ভার টেনে আইসক্রিম বিক্রি করছেন গেরমান আলী (৬৯)। তিনি এ বৃদ্ধ বয়সে গ্রামগঞ্জ ঘুরে হ্যান্ড মাইকিংয়ে এ বিক্রির উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আর তার চোখে মুখে শুধু আফসোস যমুনার ভাঙনে সবই নিয়ে গেছে আমার।
কাজিপুর উপজেলা চত্বর এলাকায় দেখা হয় তার সঙ্গে। এ সময় তিনি কাধে ভার টেনে আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন হ্যান্ড মাইকিং করে। এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নাত্তরে তিনি বলেন, আমার পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সাউথতলা ওয়াবদা বাঁধের উপর পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। এরআগে তিনি ওই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাস করছিলেন। প্রায় ১৬ বছর আগে যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে সিংহভাগ গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে অনেকের মতো আমারো বসতবাড়ি ও জমিজমা চলে যায়। এ ভয়াবহ ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে হয়েছিল।
কামলা খেটে ও কাঁশবন বিক্রি করে সংসার চালাতে হিমশিমে পড়তে হয়েছে এবং খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। এভাবে জীবন যুদ্ধে সংসার চলে প্রায় ১০ বছর। পরবর্তীতে স্থানীয়দের পরামর্শে একই এলাকার মেঘাই বাজারে আইসক্রিম ফ্যাক্টরি থেকে বাকিতে আইসক্রিম নিয়ে এলাকায় বিক্রি করি এভাবে।
এতে কিছুটা সফলতা দেখা দিলেও বাকিতে ব্যবসা নিয়ে কথা হয়। এজন্য নগদে ৪০০-৫০০ টাকার আইসক্রিম কিনি এবং কাঁধে ভার টেনে গ্রামগঞ্জ ঘুরে হ্যান্ড মাইকিংয়ে আইসক্রিম বিক্রি করি প্রায় দিনভর। আমার মাইকিং শুনে ছেলে মেয়েরা ছুটে আসে আমার কাছে। এ আইসক্রিম বিক্রিতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা লাভ হয়। এ লাভের টাকা দিয়ে সংসার চলে ৪ জনের এবং তিনি দুঃখ কষ্ট মিলে এক আনন্দের মধ্যেও জীবন কাটাচ্ছেন। এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নাত্তরে তিনি আরো বলেন, স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাসময়ে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় প্রতিবছর। আর ভাঙন রোধে কাজ করলেও অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেন। যে কারণে এ ভাঙনও রোধ হয়না প্রতিবছর। তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, এ বৃদ্ধ বয়সে উপার্জনে সংসার চালানো কষ্ট। আমার এ কষ্ট আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। তবুও এখন ভালো আছি বলে উল্লেখ করেন তিনি।