শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি ইউনিয়নের মাঝিকান্দি এলাকার আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পত্তির ছেলে আব্দুল্লাহ ছামীম (১৪) তিন ভাই-বোনের সবার ছোট। প্রবাসী বাবার আদরের সন্তান ছোট বেলা থেকেই মেধাবী হওয়ায় স্বপ্ন দেখেছিল গরীব-দুঃখীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার। সেই লক্ষেই এগিয়ে যাচ্ছিল। প্রবাসী বাবা ছেলের স্বপ্ন পূরণে পুরো পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন ভালো লেখা-পড়ার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর জানুয়ারি মাসে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বাংলা মিডিয়ামে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় ছামীমকে। সেও এগিয়ে চলছিল ধারাবাহিকভাবে।
কিন্তু গত সোমবার দুপুর ১:১৮টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসে আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যায় সেই আগুনে শুধু শিশু শিক্ষার্থীসহ ৩১ জনের জীবনই কেড়ে নেয়নি ছামীমের স্বপ্ন পুড়েও ছাই হয়ে যায়। এ যেন এক ফুটন্ত গোলাপের পাপড়ি না মেলতেই জেড ফুয়েলের আগুনের তাপে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া। এই দুর্ঘটনা শুধু নিছক একটি দুর্ঘটনা নয় আগামীর বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনাকে তছনছ করে দেওয়া। ছামীমের মা জুলেখা বেগমের বর্ণনা এরচেয়েও হৃদয় বিদারক।
তার দাবি আগামীতে যেন কোনো যুদ্ধ বিমান বা যাই কিছু হোক না কেন লোকালয়ে যেন আর না করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছামীমের মৃত্যুকে ঘিরে চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুধু স্বজনরাই নয় পুরো এলাকাবাসী শোকে পাথর হয়ে গেছে। গতকার মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে তার লাশ গ্রামের বাড়ি ভেদরগঞ্জের ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে সকাল ৯টায় চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়। উল্লেখ্য ছামীমের সৌদী প্রবাসী বাবা গতবছর ডিসেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করনে।
গতকাল বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেই ঘটনায় অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে আগুনে দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় ছামীম। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাত ১১টার দিকে ছামীম চলে যায় না ফেরার দেশে। ছামীমের মামা স্থানীয় সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সে অত্যন্ত মেধার স্বাক্ষর রেখে আসছিল। ওর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে ন্যস্ত করার। কিন্তু বিধি বাম, দুর্ঘটনায় আমার ভাগ্নেই শুধু পুড়ে ছাই হলো না, সঙ্গে ওর স্বপ্ন পুড়েও মিলিয়ে গেল আকাশে বাতাসে। দুর্ঘটনা সেতো ঘটতেই পারে। কিন্তু লোকালয়ে যেন এমন কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা না হয় যেই দুর্ঘটনা মহাপ্লাবনের সৃষ্টি করে।
ছামীমের মা জুলেখা বেগম কিছুই বলতে পারছেন না পুত্র হারানোর শোকে। শুধু তার দাবি তদন্ত সাপেক্ষে সরকার যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আমার মতো যাতে কোনো মা তার কলিজার টুকরাকে অবহেলায় না হারায়। ভেদরগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ও হৃদয় বিদারক। আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমরা সবসময় পরিবারের পাশে থাকব।