
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের দস্তনানগর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ম্যাডামরা প্রতিদিন এক হাঁটু পরিমাণ পানি পেরিয়েই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ২৫ বছর ধরে স্কুলের এমন পরিবেশের কারণে এলাকার সচেতন অভিভাবকরা আর এই স্কুলে তাদের সন্তানদের পাঠাতে চায় না। ফলে প্রতি বছর কমছে শিক্ষার্থী। জলাবদ্ধতার পানি পাড়ি দিয়ে এক শ্রেণিকক্ষ থেকে অন্য শ্রেণিকক্ষে যাতায়াত করার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক ম্যাডামরা। জলাবদ্ধতার কারণে নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। সব জলমগ্ন থাকায় একটি মাত্র শৌচাগার ব্যবহার করেন, স্কুলের সব ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকসহ কর্মচারীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাধ্যমিক এই টিন সেটের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারটি রুম থাকলে ও দুইটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে, অন্য দুটি রুমের অবস্থা আশঙ্কা জনক থাকলেও ঘষা মাজায় চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। একটু বৃষ্টি হলেই টিনের ছিদ্র দিয়ে পরে পানি, বইখাতাসহ ছাত্রছাত্রীরা ভিজে বন্ধ হয় পড়ালেখা চলে যেতে হয় বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, দস্তনানগর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৯ সালে স্থাপিত হয়ে সুদৃষ্টি নজরে চলা প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টি শুরুর পরে ২১০ জন শিক্ষার্থী ছিল, কিন্তু নির্মম পরিতাপের বিষয় বিদ্যালয়ের এই আশঙ্কাজনক অবস্থা হওয়ায় এখন মাত্র ৭২ জন শিক্ষার্থী পাঠদান করছে। এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার ও ফজলে রাব্বিসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে পানি জমে থাকে। এতে মাঠের ঘাস ও আগাছা পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ায়, চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে মশা বংশ বিস্তার করছে বিধায় ডেঙ্গুসহ নানা রোগে আক্রান্ত নিয়েও তারা চিন্তিত। উপজেলা প্রশাসন ইউএনওর কাছে দ্রুত বিদ্যালয়ের মাঠ ও অনুপযোগী শ্রেণিকক্ষসহ চার রুম বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং সংস্কারের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান টিনের ঘরটি অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বাতাসেও নড়তে থাকে। আর বৃষ্টি হলে তো আমাদের অস্তিত্ব থাকে না। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে শিক্ষকেরা এক কোণে বসে থাকি। পুরো ঘরেই টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে। বিদ্যালয়ের মাঠ হয়ে ওঠে পানিবন্দি আর শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় বিপাকে, বাংলাদেশের কোথাও এমন দুর্ভোগের মাধ্যমিক বিদ্যালয় আর আছে বলে আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, বিদ্যালয়টির বিষয়ে আমার কাছে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি, আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধির মাধ্যমে আশঙ্কাজনক অবস্থা বিষয়টি জানতে পারলাম বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।