
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে রোগাক্রান্ত একটি গরু জবাই করে মাংস কাটার পরপরই সংশ্লিষ্ট সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তাদের মধ্যে জ্বর, ফোঁড়া, ফোসকা পড়া ও শরীরের কালো দাগের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। জানা যায়, উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গরুর মাংস কাটায় নিয়োজিত থাকা ১১ জন ব্যক্তির সবাই অসুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির পাঁচ জন শিক্ষার্থীও রয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাহাবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির গরু হঠাৎ অসুস্থ হলে তা জবাই করা হয় এবং ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
এর ২-৩ দিন পর থেকে গরু জবাই করা মৌলভিসহ মাংস কাটায় নিয়োজিত সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে এটি অ্যানথ্রাক্স বা তরকা ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রামক রোগ হতে পাড়ে বলে প্রাথমিক ধারণা করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে।
অসুস্থরা হলেন, ওই এলাকার মৃত খমির উদ্দিনের ছেলে মোজাহার আলী (৬০), মৃত নইম আলীর ছেলে মোজাফফর মিয়া (৫০), মৃত আজিজল হকের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩৭), মাহাবুর রহমানের ছেলে খতিব উদ্দিন (৩০), মোজাহার আলীর ছেলে ফরিদুল ইসলাম (২৩), হোসেন আলীর ছেলে মারুফ মিয়া (১৩), শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (১৪), হোসেন আলীর ছেলে নুরুন্নবী নিয়া (১৩), মজিবুর রহমান মন্টু মেম্বারের ছেলে হাসান মিয়া (১৪), মৃত মোকসেদুলের ছেলে গোলজার রহমান (২৫) ও মিঠু মিয়া (১৬)।
গরু জবাই করে অসুস্থ হওয়া মৌলভি মোজাফফর মিয়া বলেন, গরুর মালিক মাহবুর আমাকে এসে জানান তার একটি গরু অসুস্থ হয়েছে। পরে তার সঙ্গে গিয়ে গরুটি জবাই করে দেই।
জবাই করার সময় রক্তের ছিটা এসে আমার বাম চোখের উপরে ভুরুর কাছে পড়ে। তার ২ দিন পর চোখ ফুলে ফোসকা পড়ার মতো হয়েছে এবং প্রচণ্ড জ্বর শুরু হয়।
অসুস্থ অন্য ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম জানান, গরু জবাই করার কথা শুনে, সেখানে গিয়ে মাংস কাটি। তারপর থেকে আমার দুই হাতে ফোসকা পড়ে, শরীরে কিছু জায়গায় ফোড়া ওঠে এবং প্রচন্ড জ্বর শুরু হয়। যা সহ্য করা খুবই কষ্টকর। ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসান মিয়া বলেন, অসুস্থ গরুর মাংস কাটলে কি অবস্থা হবে আমাদের আগে জানা ছিল না। তাই মাংস কাটতে গিয়েছিলাম।
এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি, খুব কষ্ট হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে স্কুলেও যাওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্রুত খামারিদের ও গবাদি পশু পালনকারীদের সচেতন করা না হলে, আরও ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
গরুর মালিক মাহাবুর রহমান জানান, এই রোগের বিষয়ে আগে থেকে জানা থাকলে কখনই এত বড় ভুল হতো না। আমার নিজের ছেলেও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে বা কোথাও থেকে এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন করা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছিল এবং ওই এলাকায় যত গরু আছে সবগুলোর ভ্যাকসিন কমপ্লিট করানো হয়েছে।
যাদের মাংস ফ্রিজে রাখা ছিল সেগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে এবং ওই এলাকায় উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।