
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় টানা তিন দিনে চার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক শিশুর প্রাণহানিতে শোকের আবহে ভরে গেছে পুরো উপজেলার গ্রামাঞ্চল। শিশুরা খেলার ছলে বাড়ির পাশের পুকুরে, খালে কিংবা জলাশয়ে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া এসব মৃত্যুর ঘটনায় অভিভাবকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোক ও আতঙ্কের ছায়া, এলাকাজুড়ে বইছে নিস্তব্ধতা।
ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রথমটি ঘটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে রায়পুর উপজেলার ১নং উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে। সেখানে পুকুরে ডুবে প্রাণ হারায় দুই চাচাতো বোন, সাবিহা (৯) ও নাজিফা (১০)। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালে তারা একসঙ্গে বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নামে। একপর্যায়ে দুজনই পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ২ অক্টোবর সকালে উপজেলার ২নং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে বাড়ির পাশের খালে ডুবে মারা যায় পাঁচ বছরের শিশু মো. সুমন হোসেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালে খেলতে গিয়ে অসাবধানতাবশত খালে পড়ে যায় সুমন। কিছুক্ষণ পর পানিতে ভাসতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করেন, কিন্তু তখনও প্রাণ ছিল না ছোট্ট শিশুটির। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকালে উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে বাড়ির পাশের বেড়ি খালে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যায় ১২ বছর বয়সী সামিয়া আক্তার। সে স্থানীয় পলাশ হোসেন ও সোনিয়া আক্তারের মেয়ে। সকাল ১০টার দিকে গোসল করতে গিয়ে সামিয়া খালে পড়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা অনেক খুঁজাখুঁজি করে শেষে পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। একমাত্র কন্যার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে সামিয়ার পরিবার।
মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে চার শিশুর মৃত্যুতে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষাকালে খাল-বিল ও পুকুরের পানি বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাছাড়া অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং নজরদারির ঘাটতির কারণেও এমন ট্র্যাজেডি ঘটছে বারবার।
উত্তর চরআবাবিলের বাসিন্দা সোলায়মান হোসেন বলেন, প্রায় প্রতি বছরই এভাবে কয়েকজন শিশু মারা যায়। এখন সময় এসেছে সবাইকে সচেতন হওয়ার। শিশুরা যেন একা কোথাও না যায়, এটা অভিভাবকদের নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে স্থানীয় নারী রহিমা বেগম বলেন- পানি বেড়ে গেছে, কিন্তু কেউ শিশুদের সাবধান করছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সচেতনতামূলক প্রচারণা দরকার।