
পটুয়াখালী পৌর শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক সব জায়গাতেই এখন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। গত এক বছরের ব্যবধানে এই রিকশার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ ও সচেতন নাগরিকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এখনই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা না নিলে পটুয়াখালী শহরের পরিবহন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। শহরের প্রধান সড়ক ফৌজদারীপুল, জেলা স্কুল মোড়, পুরান বাজার, নতুন বাজার ও সবুজবাগ এলাকায় প্রতিদিনই দেখা যায় শত শত ব্যাটারি রিকশা। অনেক চালকেরই মোটরচালিত যান চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বেপরোয়া গতি ও হঠাৎ মোড় নেওয়ার কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই রিকশার চালকেরা প্রায়ই ট্রাফিক সিগন্যাল উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে চলে যায়। এতে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় প্রায়ই যানজট তৈরি হয়। পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে কর্মরত নার্স লক্ষী জানান, গত কয়েক মাসে ব্যাটারি রিকশা দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আহত হচ্ছেন। নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আলআমিন বলেন, রিকশায় চড়া সহজ হয়েছে, ভাড়া কম। কিন্তু চালকেরা এমনভাবে চালায় যে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চাকরি হারিয়ে ব্যাটারি রিকশা চালানো শুরু করেছেন ২৮ বছর বয়সি কামরুল হাসান। তিনি জানান, আগে দোকানে কাজ করতাম। এখন দিনে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা আয় হয়। প্যাডেল রিকশার চেয়ে এটা অনেক আরামদায়ক। কামরুলের মতো শত শত মানুষ এখন এই পেশায় যুক্ত হয়েছেন। শহরের পুরান বাজার, নতুন বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও কলাতলা এলাকায় গজিয়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক রিকশা গ্যারেজ। পটুয়াখালী পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে প্রায় সব পুরোনো প্যাডেল রিকশায় ব্যাটারি বসিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব রিকশার বেশিরভাগেরই ব্রেক সিস্টেম দুর্বল এবং নিরাপত্তার কোনো মান নেই। স্থানীয় ছোট চৌরাস্তা এলাকার মেকানিক হাসান ইমাম বলেন, এখানেই পুরোনো রিকশায় ব্যাটারি বসিয়ে দিই। একেকটার খরচ পড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাটারি রিকশা ঘণ্টায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে যা সরু শহুরে সড়কের জন্য বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিকশার নকশা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ গতি থাকে ২০ কিলোমিটার। তাদের মতে, চার্জিং স্টেশনগুলোতে নিয়ন্ত্রণ না আনলে ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা আরও বাড়বে। পটুয়াখালী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে ‘ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনস ২০২৫’ কার্যকর হলে শহরে নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ বাধ্যতামূলক করা হবে। পৌর প্রশাসক জুয়েল রানা বলেন, আমরা এখন ব্যাটারি রিকশার তথ্য সংগ্রহ করছি। সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। নিবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যতে কেউ রাস্তায় চলতে পারবে না। ধীরে ধীরে অবৈধ রিকশা বন্ধের উদ্যোগও নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, পৌর এলাকায় রিকশা চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনাও রয়েছে। সর্বোপরি, পটুয়াখালী শহরের নাগরিকরা একদিকে সস্তা যাতায়াতের সুবিধা পাচ্ছেন, অন্যদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা চান, সরকার ও পৌর কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর নীতিমালা বাস্তবায়ন করুক যাতে ব্যাটারি রিকশার সুফল বজায় থাকে, কিন্তু ঝুঁকি কমে আসে।