ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুর্ভোগে লাখো মানুষ

চান্দিনার গ্রামীণ সড়ক এখন মরণফাঁদ

* কাদাপানি মাড়িয়ে হাঁটার কারণে শুধু জামাকাপড় নষ্ট হচ্ছে না, বরং এই জলাবদ্ধতা ও কাঁদা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের রোগবালাই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো ও নিরাপদে বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না, ফলে ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন
চান্দিনার গ্রামীণ সড়ক এখন মরণফাঁদ

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাগুলোর অবস্থা এতটাই বেহাল যে এখন তা সাধারণ মানুষের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে সংস্কারের অভাবে এবং নিম্নমানের কাজের কারণে এখানকার অধিকাংশ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে বর্ষাকালে এই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। পিচ উঠে গিয়ে সড়কের স্থানে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, যা সামান্য বৃষ্টিতেই ডোবায় পরিণত হয়। এই গর্তগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তাগুলোর পাশে অতিরিক্ত মৎস্য খামার গড়ে ওঠার কারণে মৎস্য খামারের জন্য আলাদা কোনো পাড় না থাকায় সরকারি রাস্তা ভেঙে খামারে চলে যাচ্ছে।

চান্দিনা উপজেলায় মোকামবাড়ী-বারেরা-বদরপুর সড়ক, চান্দিনা-শীমন্তপুর সড়ক, চান্দিনা-বরকইট, ইলিয়টগঞ্জ-কৃষ্ণপুর, মাধাইয়া-নবাবপুর এবং কুটুম্বপুর-গল্পাই সড়কসহ প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত খারাপ। এই সড়কগুলো স্থানীয়দের জন্য উপজেলা সদর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এসব পথে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি কিংবা সিএনজি পর্যন্ত চলাচল করা কঠিন। যানবাহনগুলো চলে ঝুঁকি নিয়ে, প্রায়ই বিকল হয়ে মাঝ রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। এতে যাত্রী ও চালকদের সময় এবং অর্থের অপচয় হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মাঝেমধ্যে কিছু রাস্তার মেরামত হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে তা স্বল্প সময়ের মধ্যেই আবার আগের রূপে ফিরে আসে, যা পরিস্থিতিকে আরও হতাশাজনক করে তুলেছে। এই বেহাল রাস্তার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রোগী ও গর্ভবতী নারীরা।

কাঁদা-পানি মাড়িয়ে হাঁটার কারণে শুধু জামাকাপড় নষ্ট হচ্ছে না, বরং এই জলাবদ্ধতা ও কাঁদা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের রোগবালাই। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো ও নিরাপদে বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন না, ফলে ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি দেবিদ্বার-চান্দিনা আঞ্চলিক সড়কের বেহাল অবস্থার প্রতিবাদে সড়কের গর্তে জমে থাকা পানিতে স্থানীয়ভাবে মাছের পোনা ছেড়ে এক অভিনব প্রতিবাদও জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যা এই সড়কের দুরবস্থার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র অনুযায়ী, দেশের গ্রামীণ সড়কগুলোর বড় একটি অংশই বর্তমানে বেহাল দশায় রয়েছে। বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে সময়মতো অনেক রাস্তার কাজ শুরু বা শেষ করা যায়নি।

এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলীও স্বীকার করেছেন যে আর্থিক সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় রাস্তার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই আশ্বাস যথেষ্ট নয়। তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেকসই ও মানসম্পন্ন রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করা হোক।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র অনুযায়ী, গ্রামের মানুষ এখন শুধু অপেক্ষায়, কবে তাদের এই দুর্ভোগের ইতি ঘটবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি ও জনজীবন স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দ্রুত সংস্কার এখন চান্দিনাবাসীর সময়ের দাবি। রাস্তা গুলো সংস্কারের ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সব রাস্তার খবর আমাদের নিকট আছে, তবে আমরা বর্ষা যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সব রাস্তার মেরামতের কাজ করব। যে সমস্ত মৎস প্রজেক্টের মালিক প্রজেক্টের পাড় তৈরি না করে সরকারি রাস্তাকে পাড় হিসেবে ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত