ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সখীপুরে বেড়েছে জোঁকের উপদ্রব

সখীপুরে বেড়েছে জোঁকের উপদ্রব

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে জোঁকের উপদ্রব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ, কৃষক ও গবাদিপশু পালকরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িঘরের আশপাশ থেকে শুরু করে কৃষিজমি, ডোবা-নালা, এমনকি জলাশয় ও স্যাঁতসেঁতে স্থানে জোঁকের ব্যাপক বিস্তার দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে চলমান বর্ষাকালীন স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এই উপদ্রবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টির জল বা ভেজা মাটির সংস্পর্শে এলেই ঝাঁকে ঝাঁকে জোঁক শরীরে লেগে রক্ত শোষণ করছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন কৃষিকাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা। ধানখেত বা আর্দ্র জমিতে কাজ করতে গেলে তাদের পা, হাত, এমনকি শরীরের গোপন অংশেও জোঁক কামড়ে ধরছে।

অনেক স্থানে জোঁকের ভয়ে শ্রমিকরা মাঠে নামতে অনীহা প্রকাশ করায় ফসল রোপণ ও কাটায় বিলম্ব হচ্ছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মুচারিয়া পাথার, বড়চওনা, দারিপাকা, কচুয়া, কালিয়া, মৌলভীবাজার, শ্রীপুর, বটতলীসহ প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে জোঁক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে বা জলাশয়ের ধারে চরাতে গেলে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার শরীরে জোঁক লেগে রক্ত শোষণ করছে। এতে পশুগুলোর দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা এমনকি ছোট পশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

শুধু খেত নয়, বাড়ির ভেতর-বাইরেও জোঁকের উপদ্রব বেড়েছে। স্যাঁতসেঁতে জায়গা, জল রাখার পাত্র, কিংবা ঝোপঝাড়ে এদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জোঁক রক্ত শোষণের সময় এমন একধরনের লালা নিঃসরণ করে যা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে কামড়ের পর ক্ষতস্থান থেকে দীর্ঘসময় রক্তপাত হতে পারে। উপজেলার মুচারিয়া পাথার গ্রামের কৃষক আহাদ উল্লাহ জানান, জোঁকের উপদ্রবে খেতে খামারে কাজ করা যায় না।

গরু-ছাগল মাঠে নিয়ে গেলে জোঁকে আক্রমণ করে। পাথারপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান, আমরা শিক্ষার্থীরা জোঁক আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসি। রাস্তাঘাটে জোঁক আক্রমণ করে, বিদ্যালয় মাঠে জোঁকের উপদ্রব আরও বেশি থাকায় আমাদের সমাবেশ ক্লাস মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। আ. রহিম মিয়া নামের এক কলা চাষি জানান, জোঁকের উপদ্রবের কারণে খেতে কাজ করতে পারি না। শ্রমিকদের টাকা দিলেও জোঁকের আক্রমণের ভয়ে তারাও কাজ করতে চান না। আমরা খুব সমস্যার মধ্যে আছি। এদিকে জোঁক তাড়াতে অনেকেই লবণ, তামাকের গুঁড়া বা জল, ডেটল মিশ্রিত পানি ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ গামবুট বা পলিথিন দিয়ে পা মুড়িয়ে মাঠে নামছেন।

তবে এসব পদ্ধতি সাময়িক উপশম দিলেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই জোঁক উপদ্রব গ্রামীণ অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। উপজেলা কৃষি অফিসার নিয়ন্তা বর্মন জানান, এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকায় জোঁকের উপদ্রব বেশি দেখা যাচ্ছে। আমরা কৃষক ভাইদের তাদের বাড়ির আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশকের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে আপনারা এসব জোঁক দমন করতে পারবেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মো. সাইদুর রহমান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জোঁকের উপদ্রব বেশি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে খুব শিগগিরই জোঁক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধি, ওষুধ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করে দ্রুত জোঁক নিধন ও গবাদিপশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত