ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের ১৮ মাসের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি

মাদ্রাসা ভবন নির্মাণের ১৮ মাসের কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার কোরাইশমুন্সি ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার ৪তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ কাজ ১৮ মাসে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ছয় বছরেও শেষ হয়নি। এতে করে নতুন ভবনে উঠতে না পারায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ নিতে পারছে না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় ভবন নির্মাণ না হওয়াকেই দুষছেন স্থানীয়া। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ভবনটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, দাগনভূঞার কোরাইশমুন্সি ফাজিল মাদ্রাসায় নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিরূপনের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ সালে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪তলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও ৬ বছর পরও তা সম্পন্ন করা হয়নি। ধীর গতিতে কাজ চালিয়ে নেওয়া, কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিলেও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা পালিয়ে যাওয়ার পর ভবন নির্মাণের দীর্ঘসূত্রিতার বিষটি জনরোষে জনসম্মুখে চলে আসে।

সম্প্রতি ভবনটি পরিদর্শনে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক নবনির্মিত ভবনের ৪র্থ তলায় ছাউনির ফিনিশিংয়ের কাজ করছেন। এখনও বাকি রয়েছে প্লাস্টারিং কাজ, দরজা লাগানো, গ্লাস ও মোজাইক বসানো এবং আর্টিজান সিঁড়িসহ নির্মাণ কাজ। স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে দায়সারা কাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয় হারুন নামের এক ব্যক্তি জানান, ২০১৮ সালে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ঠিকাদারেরা কার্যাদেশ পেত। মাদ্রাসা ভবনটিও ওই সময়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দোসর প্রভাবশালী ঠিকাদার সেলিমকে পাইয়ে দেওয়া হয়। সেলিম কাজটি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন লোকজন দিয়ে কাজটি চালিয়ে নিচ্ছে। কাজের গুণগত মান দেখারও কেউ নেই। মাঝে মধ্যে কাজ হয়; আবার মাঝে মধ্যে কাজ বন্ধ থাকে। এসব নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগও অজানা কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।

মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জানান, আমাদের ক্লাসে প্রায় ১০০ জন ছাত্র ছাত্রী নিয়মিত উপস্থিত থাকে। শ্রেণিকক্ষ ছোট হওয়ায় গাদাগাদি করে বসতে হয়। বিরতির সময়ে শৌচাগারে লাইন ধরে অনেকক্ষণ দাড়িঁয়ে থাকতে হয়। নানা সমস্যার মধ্যে থেকেই আমরা পড়াশোনা করছি। নতুন ভবনটি চালু হলে আর কোনো সমস্যা আমাদের থাকতো না।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, বর্তমানে মাদ্রাসায় ১,১০০ জন শিক্ষার্থী দ্বীনি ইলম শিখছে। বর্তমানে মাদ্রাসায় যে ভবন রয়েছে কোনোভাবেই তা দিয়ে শিক্ষার্থী সংকুলান করা যাচ্ছে না। এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ শৌচাগারসহ প্রয়োজনীয় কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে হিমসিম খাচ্ছি। এদিকে দেড় বছরের সময় নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণের কাজটি এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনটি দ্রুত চালু করতে পারলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশে উন্নতি ঘটতো। আরও বেশি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যেত। তাই আমরা ভবনটি দ্রুত চালুর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী মো. সেলিম জানান, ভবনের কাজ শুরু করার পর থেকে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ফান্ড ছাড় দেয়নি। যার কারণে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখন ফান্ড পেয়েছি। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সামাদ বলেন, ফান্ড ক্রাইসিসের কারণে ভবন নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়। কাজে ধীর গতির কারণে ওই ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মাদ্রাসা ভবনটি বুঝিয়ে দিতে না পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার নাজমুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মহোদয় ফেনী অফিস পরিদর্শনে এসে ওই ঠিকাদারের সঙ্গে বসেছেন। বিস্তারিত আলোচনা শেষে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ব্যতিক্রম হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত