ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মেঘনার ডেঞ্জারজোনে ফিটনেসবিহীন নৌ পারাপার

মেঘনার ডেঞ্জারজোনে ফিটনেসবিহীন নৌ পারাপার

ভোলার মেঘনা নদীর ডেঞ্জারজোনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলা-লক্ষীপুরসহ অন্তত ২৫টি রুটে চলছে ফিটনেসবিহীন অবৈধ নৌযান। প্রতিদিন এসব রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারে কারণে নৌ-দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ নৌযান বন্ধ করতে পারছে না। তারা কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা না করেই ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে চলছে ছোট ছোট ট্রলার ও স্পিডবোটের রমরমা ব্যবসা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মার্চ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ মাস ভোলার ইলিশা থেকে মেঘনা নদীর দক্ষিণ বঙ্গপোসাগর মোহনা পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্নিত করে সি সার্ভে ছাড়া সব ধরনের অনিরাপদ নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেলার উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় দিয়ে চলছে ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট কাঠের নৌযান, স্পিড বোট, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। ভোলা-লক্ষীপুর রুটে দুটি লঞ্চ ও একটি সি-ট্রাক সরকারি অনুমোদন নিয়ে চলাচল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে বন্ধর নগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হওয়ায় প্রতিদিন এ জুটে কয়েক হাজার মানুষ যাতায়ত করে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক নির্ভরযোগ্য যান থাকায় প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অবৈধ ট্রলার ও স্পিডবোট যোগে উত্তাল মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছে।

ইলিশা ঘাটের ইজারাদারসহ একাধিক যাত্রী জানান, এ রুটে শীত মৌসুমে ১১টি ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু এখন মাত্র অনমোদিত ২টি লঞ্চ ও ১টি সি-ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু এতে করে বহু যাত্রী দূরদূরান্ত থেকে আসলেও তারা লঞ্চ সি-ট্রাক পায় না। যার কারণে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ট্রলার ও স্পিডবোট দিয়ে চলাচল করছে।

এদিকে ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাটের কাছেই নৌ থানা ও ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট থেকে লক্ষীপুর রুটে প্রতিদিন ট্রলার স্পিডবোট যোগে যাত্রীদের পারাপার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

ভোলা ইলিশা ফেরিঘাটের অবৈধ ট্রলার পরিচালনাকারী জামাল স্বীকার করেন, তিনি অবৈধভাবে ট্রলার চালাচ্ছেন। তার ট্রলারে ডিফেন্সের লোক চলাচল করেন। তবে ধারণ ক্ষমতার চাইতে কম লোক নিয়ে আবহায় ভালো থাকলে ট্রলার ছাড়েন। কিন্তু পুলিশ জানলেও তার কোনো কিছুই হচ্ছে না।

শুধু ভোলা-লক্ষীপুর রুটই নয় ভোলার দৌলতখান, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিন থেকে লক্ষীপুরের আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ঘাট থেকে চরফ্যাসনের বেতুয়া, তজুমদ্দিন-চরজহিরউদ্দিন, হাজিরহাট ঘাট-মঙ্গলসিকদার, হাজিরহাট ঘাট-কলাতলীর চর, তজুমদ্দিনের চৌমুহনী লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন একটি ফিটনেসবিহীন ও সি-সার্ভেন ছাড়া ও ইঞ্জিন চালিত একটি ছোট ট্রলার মনপুরার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এছাড়াও দৌলতখান-মির্জাকালু থেকে চর জহিরুদ্দিনে ছোট কাঠের ইঞ্জিন চালিত ও সি-সার্ভের প্রত্যয়ন ছাড়া একাধিক ট্রলারে সাধারণ যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। অন্যদিক মহিষখালী মাছঘাট, চৌমুহনী লঞ্চঘাট, শশীগঞ্জ স্লুইজঘাট-প্রতিনিদি চরজহিরুদ্দিন, চরমোজাম্মেল, চর নাসরিন, চর লাদেন, চরফাজানা, নাগর পাটওয়ারীর চর, সিকদারচর ও মনপুরা উপজেলার কলাতলীর চরসহ অন্তত ২৫টি রুটে চলছে অবৈধ নৌযান ও স্পিডবোট।

সরকারি নির্ভরযোগ্য কোনো নৌযান না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবন বাজি রেখেই যাত্রীরা আল্লাহর উপর ভরসা করে যাতায়ত করছে।

প্রতিদিন ছোট ছোট ফিটনেসবিহীন কাঠের নৌকা চলাচল করলেও সেসব দেখার যেন কেউ নেই। আর এ সুযোগে এ ধরনের অসাধু নৌযান ব্যবসায়ীরা এ রুটে চলাচল করা মানুষের জীবন নিয়ে করছেন হলি খেলা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অক্টোবর-নভেম্বর মাস প্রচুর প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ার মৌসুম হলেও তজুমদ্দিন থেকে মনপুরাসহ সব নৌরুটে সি-সার্ভেহীন ফিটনেস বিহীন নৌযান চলাচল করলেও তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা করেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

প্রশাসনের নিরবতায় বড় ধরনের নৌ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে সাধারণ যাত্রীরা। এসব অবৈধ নৌযানের মালিকপক্ষ ও স্টাফরা জোড়পূর্বক তাদের ফিটনেসহীন নৌযানে তুলে নেয় যাত্রীদের। নৌ-দুর্ঘটনায় এসব যাত্রীদের দায় নেবে কে?

যাত্রী আ. মতিন কেরানি, মাহাবুব, রুবেলসহ অনেক যাত্রী জানান, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌরুটে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ হওয়ায় প্রয়োজনের তাগিদে নদী পথেই যাতায়াত করতে হয় যাত্রীদের। কিন্তু মনপুরায় একইঘাটে সরকারি সি-ট্রাক ও ছোট নৌকাটি ঘাট করায় আমরা নৌকায় উঠতে না চাইলেও স্টাফরা যাত্রীদের জোরপূর্বক তুলে নেয়। তখন বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার, ইঞ্জিন নৌকা, ফিটনেসবিহীন ছোট ছোট লঞ্চে মেঘনা নদীর জেঞ্জার জোন পারি দিচ্ছে।

সি-ট্রাকের ইজারাদার নুরুদ্দিন মিয়া বলেন, যেহেতু মেঘনা সারাবছরই ডেঞ্জারজোন সেহেতু ফিটনেসহীন এসব ছোট ট্রলার এরুটে চলাচল করার বৈধতা নেই। তবুও প্রতিপক্ষ তার লোকজন জোরপূর্বক মনপুরা থেকে যাত্রী তুলে নিয়ে যায়। যে কারণে গত প্রায় এক বছরে আমি প্রায় ৯ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্থ। এভাবে চলতে থাকলে আমি সি-ট্রাক বন্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো পথ থাকবে না। তখন যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বেশি হবে।

জেলা পরিষদের সাব-ইজারাদার মো. বাপ্পি বলেন, আমি জেলা পরিষদের সাব ইজারাদার হিসেবে ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছি। তবে জোরের কোনো বিষয় নেই মানুষ তারা ইচ্ছেমত পারাপার হচ্ছে। তবে তিনি তার সি-সার্ভের রিপোর্ট রয়েছে দাবি করলেও তা প্রমাণ দিতে পারেনি।

বিআইডব্লিউটিএ ভোলা নদী বন্দরের পরিবহন বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধ নৌযান বন্ধের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত