
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ কয়েকটি জেলায় আমন ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আধা পাকা ধানগাছ নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া জমিতে পানি জমে শীতকালীন সবজিরও ক্ষতি হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : সরেজমিনে পরিদর্শন ও কৃষি বিভাগের সূত্রে স্টাফ রিপোর্টার তফিজ উদ্দিন জানান- সিরাজগঞ্জে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে বিশেষ করে আধা পাকা রোপা আমন ধান পানিতে ডুবে ও লুটিয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে এ জেলায় দফায় দফায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক মাঠ ঘাট পানিতে ভরে গেছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে কালো মেঘের তর্জন গর্জন শুরু হয় এবং এতে সিরাজগঞ্জে ভারী বর্ষণে খালবিলসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে সয়লাব করে। সেইসঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় আধা পাকা ধান পানিতে ডুবে ও লুটিয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে কাঁচামরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির বাগানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষকের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এ জেলার শস্যভাণ্ডার খ্যাত তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া উপজেলা এবং কামারখন্দ ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এসব এলাকার মাঠ জুড়ে আধা পাকা রোপা আমন ধান পানিতে ডুবে ও লুটিয়ে পড়ে রয়েছে।
এ দৃশ্য গতকাল শনিবার দিনভর কৃষকেরা তাদের জমির এমন ক্ষয়ক্ষতি দেখেন এবং অনেক কৃষক কান্নাকাটিও করছেন। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সিরাজগঞ্জের চলনবিল এলাকার শস্যভাণ্ডার খ্যাত তাড়াশ উপজেলা কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক একেএম মঞ্জুরে মওলা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে এ জেলার বিভিন্ন স্থানে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমন ধানসহ সবজি বাগানে এ পর্যন্ত সাড়ে ৭০০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এরমধ্যে আধা পাকা রোপা আমন ধান বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরইমধ্যে এসব ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নীলফামারী : জেলা প্রতিনিধি স্বপ্না আক্তার জানান- নীলফামারীতে টানা দুদিনের ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষি ক্ষেত্র। এতে চলতি মৌসুমের আমন ধান ও শীতকালীন সবজি উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, মাঠের আধপাকা ধানগাছ বৃষ্টির চাপে নুয়ে পড়েছে এবং বহু জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘরে ফলন তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর নীলফামারীতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে ধানের ক্ষতি বেশি। ধানগাছ হেলে পড়ায় গোড়ায় পচন ধরার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এদিকে, আমন ধান কাটার প্রস্তুতির পাশাপাশি কৃষকরা প্রায় ৫,৫৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ বিভিন্ন সবজির খেতেও ক্ষতির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলায় (যার মধ্যে নীলফামারীও রয়েছে) চলতি মৌসুমে ৪২,১৩০ হেক্টর জমি থেকে ১১ লাখ টনের বেশি সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সৃষ্ট এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় সেই লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সদর উপজেলার কৃষক আছাদুল হক বলেন, ধান প্রায় পেকে গিয়েছিল, কাটার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সব ধান মাটিতে পড়ে গেছে। পানি না নামলে ঘরে তুলতে পারব না। একই এলাকার অন্য কৃষক হাবিবুর ইসলাম জানান, ঝড়ো বাতাসে ধানগাছ পড়ে গেছে। বছরের পরিশ্রম যেন এক রাতেই শেষ হয়ে গেল। শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, আলুসহ শীতকালীন সবজির খেতেও ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি জমে থাকায় শিকড় পচে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর রহমান বলেন, ‘নিম্নচাপের প্রভাবে কিছু এলাকায় ধান ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও নুয়ে পড়া ধানগাছ বাঁধার জন্য। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং কৃষকদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ শেষে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কৃষক সমাজের দাবি, বাস্তবভিত্তিক সহায়তা ছাড়া কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই তারা সরকারের তাৎক্ষণিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা : জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে মাটিতে নুয়ে পড়েছে রোপা আমন ধান। ফলন ঘরে তোলার আগমুহূর্তে আধা পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আমন চাষিরা। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে মাঠের পাকা ধানগুলো কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু কার্তিকের শেষে অসময়ের বর্ষণে পাকা ধানগুলো মাঠে শুয়ে যায়। এতে ভারী বর্ষণে ধান ও ভুট্টা সবজি খেতে পানি জমে গেছে। ফলে মাঠের ধান ও ভুট্টা সবজি নষ্ট গেছে। প্রতিনিধি শরীফ উদ্দীন জানান- জেলার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের আমনের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হলুদ হয়ে আসা ধানের খেতগুলো মাটিতে মিশে রয়েছে। বিঘার পর বিঘা জমির ধান শুয়ে পড়ায় ফলন ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা এলাকার হাসান আলী হোসেন আলী ২ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। ১৫ দিন পর ধান কাটার কথা ছিল তার। তিনি হতাশা নিয়ে বলেন, অনেক কষ্ট করে আবাদ করেছি। আর যখন কাটার সময় হলো, তখন পাকা ধানে মই দিয়ে গেল বৃষ্টি। জমিতে পানি জমে শিষ ভিজে নষ্ট হচ্ছে, ফলন অর্ধেক হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের টানা ও মাঝারি বৃষ্টিতে খেতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। এতে ভুট্টা ও সবজি চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। অসময়ে বৃষ্টিপাতে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবার ভালো ফলনের আশায় ছিল কৃষকেরা। কিন্তু সে আশা গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। সবজির খেত নিয়েও তারা চরম বিপদের শঙ্কায় রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানান, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে এবং কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আর ও বলেন, ‘কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, যেসব ধান শুয়ে পড়েছে সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে কিছুটা হলেও ক্ষতি কম হবে। চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩৬ হাজার ৭৮৪ হেক্টরে আমনের আবাদ করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : প্রতিনিধি মশিউর রহমান জেহাদ জানান- চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছরের ভারী বৃষ্টিপাতে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এরফলে জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষজনের জনজীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশপাশি বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। ফসলি জমি ও পুকুর ডুবে যাওয়ায় কৃষি ও মৎস্যখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে রাত ৮টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত চলে। এর ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা যেমন- নিউ মার্কেট, বালুবাগান, নিমতলা, অক্ট্রয় মোড়, ফুড অফিস মোড়, বাতেন খাঁ মোড়, কোর্ট চত্বর হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, বৃষ্টিতে তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। শহরে চলমান ড্রেন নির্মাণকাজের কারণে পানি নিষ্কাশন দ্রুত হচ্ছে না, যা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ভারী বৃষ্টিপাতে জেলার রেল যোগাযোগও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। আমনুরা থেকে সদর উপজেলার বড়পুকুরিয়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, পানি জমে যাওয়ায় আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়াও ঈশ্বরদী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী ৫ আপ রাজশাহী কমিউটার ট্রেনটি অতিরিক্ত পানির কারণে বড়পুকুরিয়া এলাকায় ৪ ঘণ্টা আটকা পড়ে, ফলে শত শত যাত্রী দুর্ভোগের শিকার হন। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে পানি নামার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নওগাঁ প্রতিনিধি : জেলা প্রতিনিধি আব্বাস আলী জানান- অসময়ে বৃষ্টিতে নওগাঁয় আগাম জাতের শাক-সবজি ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে- জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়া আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলা বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য মতে- জেলায় গত ৩ দিনে গড় ৫০.৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল শনিবার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও মান্দা উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। যেসব জমিতে আগাম আলুর বীজ রোপণ করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমায় বীজ পচে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষক। এছাড়াও আগাম জাতের শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বেগুন, মুলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি এবং রসুন ও পিয়াজখেতে বৃষ্টির পানি জমেছে। এছাড়াও পাকা ও আধাপাকা রোপা আমন ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কৃষকরা বলছেন- হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম জাতের শাকসবজির জমিতে পানি জমে থাকায় পচন ধরে নষ্ট হচ্ছে। রোপিত রসুন-পেঁয়াজ ও আলু ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিন পর রোপা আমন ধান কেটে ঘরে উঠানোর কথা। তার আগেই জমিতে পানি জমে ধান মাটিতে শুয়ে পড়ায় বিঘাতে ফলন অন্তত ৫-৬ মণ কম হবে। সদর উপজেলার হাপানিয়া গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন- এক বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেছি। আর কয়েকদিন পর কাটার কথা। এরমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমে ধান শুয়ে পড়েছে। পানিতে ধান ভাসছে। যেখানে বিঘাপ্রতি ২৫-২৬ মণ ফলন হওয়ার কথা। এখন সেখানে ১৮-২০ মণ ফলন হতে পারে।
লক্ষণপুর গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন- গত ১৫ দিন আগে ২ কাঠা জমিতে লাল শাক রোপণ করেছি। এরমধ্যে ৩ দিনের বৃষ্টিতে শাকগুলো মাটিতে হেলে পড়েছে। পচন ধরেছে। গাছ যদি ভালো হয় ৩০০-৫০০ টাকার মতো বিক্রি হবে। বৃষ্টি না হলে আড়াই হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো।
মান্দা উপজেলা সাটইল গ্রামের কৃষক রাইসুল ইসলাম বলেন- এক সপ্তাহ আগে জমিতে পেঁয়াজ ও রসুন রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জমিতে হাঁটু পানি জমে গেছে। কিছু পেঁয়াজ ভেসে উঠেছে। এ গ্রামের মাঠে অধিকাংশ কৃষকের রসুন, পেঁয়াজ, আলু, সরিষা ও ধানের অবস্থা খুবই খারাপ। ফসলের ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, সবেমাত্র আগাম জাতের আলু, পেঁয়াজ ও রসুন রোপণ করা শুরু হয়েছে। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় ধানের ক্ষতিকর পোকা মারা যাওয়ায় বৃষ্টি আর্শীবাদ বলে জানান তিনি।