ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চার বছরেও শেষ হয়নি সংযোগ সেতু নির্মাণ

* ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় স্থবির প্রকল্প * দুর্ভোগে দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ
চার বছরেও শেষ হয়নি সংযোগ সেতু নির্মাণ

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ও ভারুয়াখালী ইউনিয়নকে সংযুক্ত করার নির্মাধীন সেতুটি দীর্ঘ চার বছরেও শেষ হয়নি। ৩৯২ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতু প্রকল্প এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষ।

জানা গেছে, জোয়ারি খাল বিভক্ত করেছে সদর উপজেলার খুরুশকুল ও ভারুয়াখালী ইউনিয়নকে। খালটির উপর সংযোগ সেতুটি চালু হলে মাত্র ৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সহজেই কক্সবাজার শহরে পৌঁছানো সম্ভব হতো। কিন্তু সেতুটি এখনও অসম্পূর্ণ থাকায় স্থানীয়দের প্রতিদিন ৩৬ কিলোমিটারের বেশি পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। খাল পারাপারের একমাত্র ভরসা এখনও ছোট ডিঙ্গি নৌকা। জোয়ার-ভাটার সময়ে এসব নৌকায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কৃষি পণ্য পরিবহনে যুক্ত মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেতুটি নির্মাণে দেরি হওয়ায় এলাকায় অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে এসেছে। বহুবার আশ্বাস পেলেও বাস্তবে কাজের অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।

২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় ‘খুরুশকুল-ভারুয়াখালী সংযোগ সেতু নির্মাণ প্রকল্প’। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। দুই দফা দরপত্র আহ্বানের পর কাজ পায় তমা কনস্ট্রাকশন ও এমএ জাহের (জেবি) লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুইবার মেয়াদ বাড়ানো সত্ত্বেও এখনও কাজ শেষ করা যায়নি।

নকশা অনুযায়ী সেতুটিতে মোট ১৩টি স্প্যান বসানোর কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টি স্প্যান নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল খালের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ এখনও শুরু হয়নি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও বরাদ্দকৃত অর্থ সময়মতো না আসায় কাজের গতি কমেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলাও প্রকল্প বিলম্বের অন্যতম কারণ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এমএ জাহের আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকে প্রকল্পে কার্যত স্থবিরতা নেমে আসে।

স্থানীয় ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজলুল হক বলেন, সেতুটি চালু হলে এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ২০ মিনিটেই শহরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেতুর কাজ শেষ হলে হাজারো মানুষের প্রতিদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

স্থানীয়রা এরইমধ্যে সেতুটি নির্মাণে মানববন্ধন ও পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দ্রুত সেতুটি চালু না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজার সদর উপজেলার আওতায় পড়েছে সেতুটি। এ প্রসঙ্গে সদরের উপজেলা প্রকৌশলী আল মুইন শাহরিয়ার বলেন, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়াতে হয়েছে। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। সেতুটি চালু হলে স্থানীয়দের জীবনমান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত