ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সড়কের সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের

সড়কের সৌন্দর্য দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের

নদীর তীরঘেঁষা ছোট সড়কটিই এখন হয়ে উঠেছে ঝালকাঠির মিনি মেরিন ড্রাইভ। এক পাশে বয়ে যাওয়া তীর বাঁধানো নদী অন্যপাশে সারি সারি গাছ, মধ্যেখানে সরু সড়ক। পড়ন্ত বিকালে এ সড়ক দিয়ে যখন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ বাইকে বা গাড়িতে ছুটে চলে তখন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণের স্বাদ কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যায়। মেরিন ড্রাইভের আদলে হলেও বর্তমানে ঝালকাঠির এ সড়কটি ভাইরাল সড়ক হিসেবেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

ঝালকাঠি শহর থেকে উত্তর দিকে ৫-৬ কিলোমিটার গেলেই নবগ্রাম ইউনিয়নের বেতরা গ্রাম। বাউকাঠি এলাকা দিয়ে এই গ্রামে যেতে সড়কের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট নদী, অন্য পাশে সারি সারি গাছ। সু-সজ্জিত ব্লক দিয়ে ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধাই করা হয়েছে নদীর তীর। সড়কটি থেকে যেতে মাঝেই দেখা যাবে সান বাঁধানো ঘাট। সড়কটিকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে ভাসমান রেস্তোরাঁও রয়েছে। গত ৪-৫ মাসে এখানে রেস্তোরাঁর সংখ্যা ও বেড়েছে। এরমধ্যে চাইনিজ রেস্তোরাঁ রয়েছে। জেলার বাইরে থেকে এসে ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করেছেন। স্থানীয়রা জানান, যতই দিন যাচ্ছে ততই এখানে দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরাঁর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝালকাঠি শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও দর্শনার্থীরা আসছে এই সড়কে সময় কাটাতে।

এখানকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা জানান তারা শৈল্পিক অবয়বে তাদের স্থাপনাগুলো তৈরি করেছেন। যাতে এখানে দর্শনাথীরা খাবার গ্রহণের পাশাপাশি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এখানকার ডুপ্লেক্স রেস্তোরাঁ এরইমধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ডুপ্লেক্স রেস্তোরাঁর মালিক জুয়েল মাঝি বলেন, সব ধরনের চাইনিজ খাবারের সমহার রয়েছে তার রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁয় বসেই খেতে খেতে যেন প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করা যায়, সেভাবে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। কয়েক মাস আগে তিনি এখানে রেস্তোরাঁ চালু করলেও এখন বেশ ভালো সারা পাচ্ছেন। তবে সড়ক বাতি না থাকায় সন্ধার পরে এখানে দর্শনাথীর সংখ্যা কমে যায়। সড়কবাতির ব্যবস্থা থাকলে রাতেও রেস্তোরাঁ আরও জমজমাট হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এই ডুপ্লেক্স রেস্তোরাঁর পাশেই রয়েছে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন চাইনিজ রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁ দুটিরই নির্মাণ শৈলী আর্কষণীয়। এছাড়া এখানে রয়েছে ভাসমান রেস্তোরাঁও। এই রেস্তোরাঁয় পর্যটকরা খেতে পারবেন চটপটি ও ফুসকা। এখানেও ভীড় জমায় ভ্রমণ পিপাসুরা।

ভাসমান রেস্তোরাঁর উদ্যোক্তা তাজুল ইসলাম সুজন বলেন, এরইমধ্যে ভাইরাল সড়কাট ব্যপক পরিচিতি পেয়েছে। আমার ভাসমান রেস্তোরাঁয় বিক্রিও বেশ ভালো। দর্শনার্থীরা এসে খাবার গ্রহণের পাশাপাশি ছবি তুলছে। দিনে দিনে দর্শনার্থী আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। কিন্তু সড়কটি নির্জন গ্রামে হওয়ায় এখানে জরুরিভিত্তিতে সড়কবাতি এবং নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এখানে সপরিবারে ঘুরতে আসা কাশেম তালুকদার বলেন, ঝালকাঠি জেলা বিনোদনবঞ্চিত। তাই এই ভাইরাল সড়ককে কেন্দ্র করে যে বিনোদন স্পট গড়ে উঠছে, এটাকে প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আরও আকার্ষণীয় করা যেতে পারে।

ভাইরাল সড়কে দেখা যায়- ঝালকাঠি শহর, পার্শ্ববর্তী বরিশালসহ ও ঝালকাঠির বিভিন্ন উপজেলা শত শত দর্শনার্থীরা এখানে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে ভিড় জমিয়েছেন। তারা কেউবা রেস্তোরাঁয় খাচ্ছেন কেই টং দোকানের আদলে গড়ে ওঠা কফি শপে কফি খাচ্ছেন। তবে এখানে আসা দর্শনার্থীদের রেস্তোরাঁর খাবারের চেয়ে রেস্তোরাঁর বিভিন্ন পয়েন্টে ছবি তুলতেই বেশি আগ্রহি দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ভাইরাল সড়ককে কেন্দ্র করে অবহেলিত বেতরা গ্রামে যে পর্যটনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সেটাকে আরও প্রসারিত করতে পারলে এখানে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানসহ সারা দেশেই এই বিনোদন কেন্দ্রটির নাম ছড়িয়ে পরবে। সরকার পদক্ষেপ নিলে শিগগিরই এটা দক্ষিণাঞ্চলের একটি আকার্ষণীয় পর্যটন স্পটে রুপ নেবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে ভাইরাল সড়ক ঘুরে এসে এখানকার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিনের সঙ্গে। এখনকার প্রধান সমস্যা সড়কবাতি প্রসঙ্গে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই এই ভাইরাল রোডে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ল্যাম্প পোস্টের ব্যবস্থা করা হবে। এরইমধ্যে ওখানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্যও ওখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত