
মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় গ্রামগঞ্জের জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ, খেটে খাওয়া লোকজন কাজে যেতে পারছেন না। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন এ পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন থাকতে পারে।
কিশোরগঞ্জ : গতকাল রোববার কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদুল ইসলাম মাসুম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিরিক্ত ঠান্ডা সবচেয়ে বেশি প্রভাব পরেছে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে। দৈনন্দিন কাজে যেতে না পেরে মানবেতর জীবযাপন করছেন তারা। প্রভাব পড়েছে বোরো ধানের আবাদে। মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় ধানের চাড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।
সিরাজগঞ্জ : হাড়কাঁপানো শীত, হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। এতে যমুনা পাড়ের গরিব ও অসহায় পরিবারের মানুষ কাঁপছে। সেইসঙ্গে কৃষকেরা মাঠে নামতে হিমশিম খাচ্ছে। জেলা উপজেলা শহর এখন জনশূন্যর সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জে প্রচণ্ড শীত, ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া বইছে। গতকাল রোববার ভোর রাত থেকে এ শীত, হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার প্রভাব আরও বাড়ছে এবং দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। এ কারণে শীতে কাঁপছে সিরাজগঞ্জের যমুনা পাড়ের মানুষ। শহর বন্দরের দোকানপাটে কেনাকাটাও কমে গেছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে গোটা সিরাজগঞ্জ। এই শীতে গরিব ও অসহায় পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া কৃষকেরা মাঠে নামতেও হিমশিম খাচ্ছে এবং আয় উপার্জনও হ্রাস পেয়েছে।
শহর ও গ্রামঞ্চলে আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। শহর ও গ্রামঞ্চলের হাট-বাজারে শীত নিবারণের পুরাতন কাপড় সংকট ও মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। এতে অসহায় পরিবারের লোকজন শীত নিবারণে এ কাপড় কিনতে পারছে না। এ শীতে যমুনা নদীর তীরবর্তী ৫টি উপজেলার চরাঞ্চলের গরিব ও অসহায় পরিবারের লোকজনের অবস্থা শোচনীয়। চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচএম খোদাদাদ হোসেন বলেন, এ উপজেলার চরাঞ্চলের শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে এবং শীতার্তদের তালিকা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি প্রশাসক ও চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম জানান, এরইমধ্যে জেলার ৯টি উপজেলায় সাড়ে ৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তী বরাদ্দে এ শীত নিবারণ কম্বল শীতার্তদের মধ্যে বিতরণ করা শুরু হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) : সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাদদেশ ঘিরে কলমাকান্দা উপজেলায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। চলতি মৌসুমে এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সীমান্তবর্তী অঞ্চল হিসাবে এখানে ১১-১২টার আগে কোনো সূর্যের দেখা মিলে না। এখানকার আবহাওয়া এতই কুয়াশাছন্ন, ভোরে ঘন কুয়াশায় চারপাশ ঢেকে যাওয়ায় এখানকার সড়কে যানবাহন বিভিন্ন সিগনাল লাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করছে। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের কুয়াশা ও ঠান্ডা উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে অতি ভোরে ঘর ছাড়তে হচ্ছে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষদের। আবহাওয়া বার্তা জানায়, সামনে আরও শীত পড়বে এই পাহাড়ি অঞ্চলে। গত কয়েকদিন ধরে এখানকার বাতাসের আর্দ্রতা হিম শীতল।
এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষেরা খঁড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের সাময়িক দৃশ্য দেখা যায় বিভিন্ন বাড়ি আঙিনা উঠানে। পৌষের শেষে আর মাঘের আগমনে প্রকৃতিতে এখন দাপুটে শীত।