
টেকনাফ উপজেলায় লবণের চরম দরপতনের মধ্যেও উদ্বেগ- উৎকন্ঠা ও হতাশা নিয়ে লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছে চাষিরা। লবণের সর্বনিম্ন মূল্য, পলিথিনসহ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে ভুগছে চাষিরা। এরমাঝেও বুকভরা আশা নিয়ে লবণ উপাদনে মাঠে নেমেছে টেকনাফ উপজেলার প্রান্তিক লবণ চাষিরা। কেউ কেউ লাভের আশা না করে বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে লবণ চাষ অব্যাহত রেখেছে বলে জানায়। তবে, লবণের দরপতনের এ সময়ে বেশিদিন মাঠে ঠিকে থাকার শংকায় আছে তারা। তাই, লবণের ন্যায্য মূল্যে দিতে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান সরকারের প্রতি। সরেজমিনে দেখা যায়, চাষিরা লবণ চাষের জমি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে সমতল করছে। অনেকে পানি ধরে রাখতে চারপাশে বাঁধ ও ছোট ছোট গর্ত তৈরি করছে। আবার কেউ সমতল করা জমিতে পলিথিন বিলাচ্ছেন। আবার অনেকে লবণ উত্তোলন করছে। এমনকি জমিতে সাগরের লবণ পানি ঢোকাচ্ছে। পরে, ওই লবণাক্ত পানিই সূর্যের তাপে ৪-৫ দিনে লবণ তৈরি করবে। এদিকে, টেকনাফ উপজেলায় কানি প্রতি (কানি ৪০ শতক) ৩৫০ মণ লবণ উৎপাদন হলেও বর্তমান মূল্য অনুযায়ী চাষিদের ৫৫ হাজার টাকা ঘাটতি থাকবে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের নোয়াপাড়া এলাকার প্রান্তিক লবণচাষি নুর মোহাম্মদ, জাগির হোসন, ছৈয়দ আলম ও আয়ুবসহ অনেকেই জানান, লবণ উৎপাদনের আনুসাঙ্গিক মালামালের দাম বৃদ্ধির পরেও চাষিরা নিজেদের শেষ সম্বল নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু, গত বছরের উৎপাদিত লবণ এখনো ন্যায্য মূল্যের অভাবে গর্তে মজুত রেখেছে। এরমধ্যে চলতি মৌসুমের উৎপাদিত লবণও বাধ্য হয়ে মজুদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো সময় লবণের মূল্য বাড়লে তা বিক্রি করবে। একেকটি গর্তে আট বা বারোশো মণ লবণ মজুত করতে পারে। এদিকে, অতিরিক্ত লবণ মজুত করায় আর্থিক সংকটে পড়েছে স্থানীয় চাষিরা। এ সমস্যা সমাধানে লবণের ন্যায্য মূল্য প্রদান করতে সরকারের সু নজর কামনা করেন তার। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লবণ চাষি মো. আলী, হাফেজ নুরুল হক, জাহাঙ্গীর ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নসহ অনেকেই লবণের দরপতনের সংকটে এখনও মাঠে নামেনি বলে জানান। বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, টেকনাফ উপজেলার পাশাপাশি কক্সবাজার জেলার মানুষের জীবন জীবিকা অনেকটা নির্ভশীল লবণ চাষের উপর। লবণের ন্যায্য মূল্যের দাবিটি প্রান্তিক লবণ চাষির মৌলিক অধিকার। লবণ চাষিদের এই অধিকার সুরক্ষায় এরইমধ্যে ধারার পক্ষ থেকে এ অঞ্চলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তবে, কোন সরকার এ পর্যন্ত লবণ চাষিদের এই অধিকার সুরক্ষায় উদ্যোগ নেননি। লবণ শিল্পকে কৃষি পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে লবণের ন্যায্য মূল্য প্রদানের দাবি জানান। পাশাপাশি কক্সবাজারে স্থায়ী লবণ বোর্ড গঠন করে লবণ চাষিদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।