শিশুরা এখন মাঠে খেলছে না, বরং দিনভর মোবাইল ফোন আর ফাস্টফুডে আসক্ত। অথচ তাদের খাবারেই রয়েছে ভেজাল আর পুষ্টিহীনতা। ফলে শারীরিক বিকাশ থেমে যাচ্ছে, মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় আগামীর ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।
তিনি বলেন, শুধু হাসপাতাল বানিয়ে লাভ নেই। রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ না দিলে সুস্থ জাতি গড়া সম্ভব নয়। গতকাল রাজধানীর মহাখালীর নিপসম (জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান) মিলনায়তনে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
নুরজাহান বেগম বলেন,শিশুরা এখন মাঠে খেলছে না, উঠানও নেই। তারা মোবাইল ফোনে ও ইন্টারনেটে আসক্ত হচ্ছে। ফাস্টফুড খাচ্ছে। অথচ এসব খাবার তাদের শরীর ও মস্তিষ্ক ধ্বংস করছে। পুষ্টিকর তরকারিও যদি ভুলভাবে রান্না হয়, তবে তা কোনো কাজে আসে না। তিনি বলেন,আমাদের কৃষিতেও সচেতনতা দরকার। অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার খাবারে বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। অথচ আজ পর্যন্ত কেউ খেলার মাঠ বা দূষণমুক্ত শহরের জন্য আন্দোলন করেনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. খোরশেদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এটিএম সাইফুল ইসলাম, নিপসম পরিচালক ডা. মো. জিয়াউল ইসলাম ও আইপিএইচএন পরিচালক ডা. রওশন জাহান আক্তার আলো। অতিরিক্ত সচিব খোরশেদ আলম বলেন, সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয় পুষ্টি কার্যক্রমে যুক্ত। কিন্তু মানুষ এখনো সচেতন নয়। হাঁটার অভ্যাস কমেছে, শিশুরা স্থূলতায় আক্রান্ত, এমনকি প্রবীণ শিক্ষিতদের মধ্যেও সচেতনতায় ঘাটতি রয়েছে। সচিব ডা. সারোয়ার বারী বলেন, শুধু সচেতনতা নয়, এখনই সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা দরকার। পুষ্টির সঙ্গে খাদ্য, কৃষি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যকর সমন্বয় ছাড়া বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব নয়। অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন জানান, “বাংলাদেশে এখনও ২৮ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতিতে ভুগছে, ৯ শতাংশ শিশু ওয়েস্টিংয়ে আক্রান্ত। আবার অনেক শিশু অতিরিক্ত পুষ্টি বা স্থূলতায়ও ভুগছে, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন জটিল রোগ ডেকে আনছে। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মেহেদী হাসান এবং অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশনিস্ট ডা. জয়াশীষ রয় জানান, ৩ জুন পর্যন্ত চলবে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ। প্রথম দিন উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় দিনে হবে সরকারি সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ক আলোচনা, তৃতীয় দিনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিবার্তা ও খাবার বিতরণ, চতুর্থ দিনে মানবসম্পদ ও কৈশোর পুষ্টি, পঞ্চম দিনে মাতৃপুষ্টি, ষষ্ঠ দিনে প্রবীণদের পুষ্টি এবং সপ্তম দিনে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে।