আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর বিষয়ে নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি।) এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারের সুযোগ রাখলেও বিধিমালায় আনা হয়েছে কড়াকড়ি। যার ফলে সামাজিক যোগাযোগে নির্বাচনি প্রচার শুরু করা আগে সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্য প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে।
এমন বিধি রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত খসড়ার ওপর নাগরিকদের মতামতও চেয়েছে সংস্থাটি। ইসি জানিয়েছে, এই বিধানটি রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রচারণা নিশ্চিত করা যায়। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোনো ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ রাখা যাবে না। সব প্রার্থী যেন একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তাদের ইশতেহার প্রচার করেন- এমন বিধানও যুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিধিমালা লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে আগে যেখানে ৬ মাস কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল, তা বাড়িয়ে ৬ মাস কারাদণ্ড ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এছাড়া, নতুনভাবে একটি অঙ্গীকারনামা সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল আচরণবিধি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেবে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, মনে রাখতে হবে যে আচরণ বিধিমালার অনেকগুলো পরিবর্তন বা সংশোধন এটা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিওর) ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং বর্তমানে যে এটা চূড়ান্ত হলে প্রকাশিত হয়ে যাবে। আমাদের ওয়েবসাইটে উপরে লেখা থাকবে আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে। খসড়ায় বলা হয়েছে-
‘(ক) কোনো প্রার্থী বা তাহার নির্বাচনি এজেন্ট বা অন্য কোনো ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করিয়া নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা পরিচালনা করিতে পারিবেন, তবে উক্ত ক্ষেত্রে প্রার্থী বা তাহার নির্বাচনি এজেন্ট বা উক্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইল আইডিসহ অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্যাদি উক্তরূপে প্রচার-প্রচারণা শুরুর পূর্বে রিটার্নিং অফিসারের নিকট দাখিল করিতে হইবে।’
(খ) ক্ষতিকর কনটেন্টের নিষিদ্ধতা: ১. ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভুল তথ্য ও নির্বাচন সংক্রান্ত বানোয়াট তথ্যসহ সকল প্রকার ক্ষতিকর কনটেন্ট বানানো ও প্রচারণা নিষিদ্ধ।’ ২. প্রতিপক্ষ, সংখ্যালঘু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।’ ৩. নির্বাচনি স্বার্থ হাসিল করার জন্য ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যহার নিষিদ্ধ।
(গ) ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য: ১. সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সকল কনটেন্ট শেয়ার ও প্রকাশ করার পূর্বে (ফেক্ট-চেক) সত্যতা যাচাই করতে হবে। ২. ভোটারদের বিভ্রান্তি করার জন্য তৈরি করা পক্ষপাতমূলক কনটেন্ট (যেমন, এডিটকৃত ভিডিও, বানোয়াট খবর)
খসড়ায় বলা হয়, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ, যথাযথ কর্তৃপক্ষক কর্তৃক সংশোধন সাপেক্ষে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ এর একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। বিধিমালাটি চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে নাগরিকগণের সুচিন্তিত মতামত কামনা করা হলো।
নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার একটি খসড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ওয়েব সাইট www.ecs.gov.bd -এ প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে ইসি সচিবের কাছে মতামত পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে opinion@ecs.gov.bd মেইলে মতামত পাঠাতে হবে।
নতুন দলের আবেদন যাচাইয়ে সাত সদস্যের কমিটি ইসির
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দলগুলোর করা আবেদন যাচাইয়ে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন পেতে অন্তত ১৪৭টি দল আবেদন করে।
গতকাল সোমবার ইসির জনবল ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমান এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন- নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হাসান ভূঞা, বাজেট ও ফাইন্যান্স শাখার সিনিয়র সহাকারী সচিব মো. শামসুল হক ফৌজদার ও আরাফাত আরা, এনআইডি অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক মুহা. সরওয়ার হোসেন, সংস্থাপন-২ শাখার সহকারী সচিব আফরোজা পারভীন, সহকারী সচিব আরাফাত আল হোসাইনী ও সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক।
আদেশে বলা হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দল থেকে প্রাপ্ত আবেদনগুলো আইন বিধি মোতাবেক সুচারুরূপে সন্নিবেশ ও যাচাই-বাছাইয়ের আগে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়ার জন্য ছয় কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিস আদেশে তাদের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, ওই কর্মকর্তারা নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাইয়ের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইকারী কর্মকর্তাদের পাঠানো চেক লিস্ট/প্রশ্নমালা অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের আগে প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশনসহ প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন (সফট কপি ও হার্ড কপিসহ) নির্বাচন সহায়তা শাখার উপ-সচিবকে দেবেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর অফিস, অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে। এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান রয়েছে। যেমন- কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি পূরণের প্রমাণ জমা দিতে হবে।