রাজধানীর বিজয় সরণিতে যানজট নিরসনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। সিগন্যালে রশি টানিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। বিনা প্রচারে সিগন্যালের ইউটার্ন বন্ধ করে একমুখী যানচলাচলের ব্যবস্থা করায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিজয় সরণি সিগন্যালে রাস্তার মাঝখানে রশি টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে যানবাহনগুলো ট্রাফিক সিগন্যাল ভঙ্গ করতে না পারে। জাহাঙ্গীর গেট থেকে আসা যানবাহনগুলোকে বিজয় সরণি থেকে ডানে মোড় নিতে দেয়া হচ্ছে না। মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি রুটের গাড়িগুলোকে প্রধান উপদেষ্টার অফিসের সামনে থেকে পুরাতন বিমানবন্দরে নতুন রাস্তা দিয়ে চলাচলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই ভাবে ফার্মগেট থেকে আসা যানবাহনগুলোকে ডানে বা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের দিকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এ সব গাড়িগুলো প্রধান উপদেষ্টার অফিসের সামনে দিয়ে ইউটার্ন নিতে বলা হচ্ছে। ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে যানজট নিরসনে বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে ট্রাফিক বিভাগ। বিভিন্ন সড়কে যানজট নিরসনে সুফলও পেয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার থেকে বিজয় সরণি সিগন্যালের দুটি সড়কে একমুখী যানচলাচলে বাধ্য করছে ট্রাফিক পুলিশ। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বিজয় সরণিসহ আশেপাশে সড়কে যানচলাচলের নির্দেশনা জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ অ্যাভিনিউসহ বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ফলে যানজট কমেছে। যার সুফল এরই মধ্যে জনসাধারণ পেতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয় সরণি ক্রসিংয়ের চারপাশের রাস্তায় সৃষ্ট যানজট কমাতে গতকাল শনিবার থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জাহাঙ্গীর গেট থেকে আসা মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, খেজুর বাগান, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখী যানবাহন বিজয় সরণি থেকে ডানে মোড় নিতে পারবে না। এ সব যানবাহন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রবেশ গেটের আগে ডানে মোড় নিয়ে আগারগাঁও লিংক রোডে উঠবে এবং বিআইসিসি মোড় অথবা আগারগাঁও ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। সড়কে কোনো ধরনের সাইন বা আগে থেকে দিকনির্দেশনা ছাড়া হঠাৎ করে সড়কে প্রতিবন্ধতায় নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে যাত্রীরা। তারা বলছেন, হঠাৎ করে এভাবে সড়ক নিয়ন্ত্রণে যানজট কমার চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এক কিলোমিটারের রাস্তা চার কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে। সুমন আহমেদ নামে এক চালক বলেন, যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ যে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। তবে আগে থেকে দিকনির্দেশনা না দিয়ে হঠাৎ করে কোনো কাজ করলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কের কোথাও কোনো দিকনির্দেশনা বা ব্যানার নেই মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান নামে আরেক যাত্রী বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই সরকার যা ইচ্ছে তাই করছে। যেহেতু বিজয় সরণি দিয়ে ডানে যেতে দিবে না। তাহলে জাহাঙ্গীর গেইট থেকে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণার করা উচিত ছিল। তাহলে এভাবে আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। প্রথম কিছুদিন এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হবে মন্তব্য করে বিজয় সরণিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আরিফ বলেন, সবাই যখন বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে, তখন যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমে আসবে। জাহাঙ্গীর গেইট ও ফার্মগেট থেকে আসা যানবাহনগুলোকে ডানে মোড় নিতে না দেয়া একই সঙ্গে দুইটা রাস্তার সিগন্যাল ছাড়া যাচ্ছে। এতে করে এই এলাকার যানজট কিছুটা কমে আসবে। বিজয় সরণি এলাকায় যানজট নিরসনে ডানে মোড় নিতে না দেয়া দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নানা সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, সকাল থেকে এ সব রুটে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ভিআইপি ও সামরিক যানবাহনগুলো কোনো নির্দেশনা মানতে চাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের গাড়িগুলো ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যার কারণে অন্য পরিবহনগুলোর সঙ্গেও একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।