২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গতকাল সোমবার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। গত বছরের নভেম্বরে মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই মেয়র শাহাদাত হোসেনের প্রথম বাজেট ঘোষণা। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র। এর পরিমাণ ১ হাজার ২২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। যদিও মূল বাজেট ছিল ১ হাজার ৯৮১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাজেট অধিবেশনে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অবৈধ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার দোসরদের পতনের পর মাননীয় আদালত কর্তৃক সুবিচারপ্রাপ্ত হয়ে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছি। তাই নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যাশা এবং মহানগরীকে ক্লিন-গ্রিন, হেলদি ও সেফ সিটি, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ও অর্থনৈতিকভাবে বাসযোগ্য নান্দনিক পর্যটন নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
আগামী অর্থবছরের জন্য চারটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন মেয়র। এগুলো হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনে চলমান নিয়োগ কার্যক্রম সম্পাদন, দক্ষ জনবল গড়ার লক্ষ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বর্তমান কাজের পরিধি ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় নতুন জনবল সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করে অনুমোদনের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমসহ সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ।
এবারের বাজেটে সরকারি অনুদানের পাশাপাশি নিজস্ব উৎস থেকে আয়ের ওপর জোর দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মোট বাজেটের মধ্যে ১ হাজার ৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা নিজস্ব উৎস থেকে আয় করার পরিকল্পনা রয়েছে কর্পোরেশনের। আর অনুদান খাতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২ কোটি ৫ লাখ টাকা। বাজেটে মোট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে ৬৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হবে ৩৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ৯টি প্রকল্পসহ সিটি কর্পোরেশনের রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ খাতে এই টাকা খরচ করা হবে। এছাড়া দেনা পরিশোধে ব্যয় করা হবে ১৪৯ কোটি টাকা।
মেয়র শাহাদাত হোসেনের প্রথম বাজেটে নগরের অন্যতম বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ খাতে ৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ কোটি টাকা। যদিও শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তবে বাজেটে মশকনিধন খাত গুরুত্ব পেয়েছে কম। আগামী অর্থবছরের জন্য নগরের মশকনিধন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল সিটি কর্পোরেশন। অবশ্য খরচ করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯টি খাল থেকে ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। নালা-নর্দমা পরিষ্কারে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্ষায় আরও ২০০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। মশকনিধনে আধুনিক পদ্ধতি ও আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড ব্যবহার শুরু হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে নৌবাহিনীকে দিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ চলমান বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিতেও জিইসি, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো তলিয়ে যায়নি। দায়িত্ব গ্রহণের সময় মোট ৫৯৬ কোটি টাকা দেনা থাকার কথা জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, গত ৮ মাসে ধারাবাহিকভাবে পরিশোধের পর এখন কর্পোরেশনের দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি টাকা।